‘লেখার টেবিল, বই-খাতা আছে শুধু তিনি নেই’
ড. ইনামুল হক পুরোপুরি নাটকের মানুষ ছিলেন। ছিলেন মঞ্চ-টেলিভিশনের অভিনেতা ও নাট্যকার।
গত ৫ দশক ধরে অভিনয়শিল্পেই ছিল তার পথচলা ছিল। অন্যদিকে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) অধ্যাপনা করেছেন ৪ দশক।
গত বছরের ১১ অক্টোবর পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেন একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী নাট্যজন ইনামুল হক। তাকে স্মরণ করে স্মৃতিচারণ করেছেন কয়েকজন গুণী শিল্পী।
লাকী ইনাম
ড. ইনামুল হকের লেখার টেবিল আছে, বই আছে, লেখার খাতা আছে, শুধু তিনি নেই। প্রতিদিন তাকে মিস করি। প্রতি মুহূর্তে তাকে মনে পড়ে।
আমার সারাজীবনের সঙ্গী ছিলেন তিনি। কত মধুর স্মৃতি আমাদের। একসঙ্গে অনেক পথ পাড়ি দিয়েছি। শিল্পকে ভালোবেসেছি একসঙ্গে। এভাবে হঠাৎ চলে যাবেন ভাবিনি।
দেখতে দেখতে তার চলে যাওয়ার এক বছর হয়ে গেল। তাকে আমরা আর পাব না। বিভিন্ন অকেশনে তাকে সারপ্রাইজ দিতাম দল থেকে, পরিবার থেকে—তা আর হবে না। ইনামুল হককে প্রতিনিয়ত মিস করি।
আবুল হায়াত
ফোনে কথা শুরু করলে কেউ রাখতে চাইতাম না। ইনামুল হক শিল্পের পথের মানুষ ছিলেন। আমিও শিল্পের পথের মানুষ। একসঙ্গে দীর্ঘদিন একই পথে হেঁটেছি। সমানভাবে শিল্পচর্চা করে গেছি। কখনো সেই পথ থেকে তিনি পিছপা হননি, আমিও না।
মঞ্চ নাটকে তার অবদান অনেক। টেলিভিশন নাটকেও বিশাল অবদান। নাট্যকার হিসেবেও সফল ছিলেন।
আমরা ২ জনই খুব কাছের মানুষ ছিলাম। একই পরিবারের মানুষ মনে করতাম একে অপরকে। তার একটি বড় পরিচয় ছিল শিক্ষক হিসেবে। অসংখ্য ছাত্র তার। তাকে নিয়ে আমি গর্ব করতাম।
মানুষ হিসেবে বলব অসাধারণ। মনটা উদার ছিল। বড় মনের মানুষ ছিলেন। মানুষকে সম্মান দেওয়ার বড় মন ছিল তার।
করোনাকালে আমাদের দেখা হতো না। ফোনেই কথা হতো। কথা শুরু হলে আমরা কেউই ফোন রাখতে চাইতাম না। খুব গুণী মানুষ ছিলেন। তার শূন্যতা সবসময় অনুভব করি।
আসাদুজ্জামান নূর
খুব সরল মানুষ ছিলেন ড. ইনামুল হক। ছিলেন আপাদমস্তক নাটকের মানুষ। অভিনয় ছাড়া কিছু বুঝতেন না। অভিনয় ভালোবাসতেন। অভিনয়কে ভালোবেসে পথ চলেছেন পূর্ণ জীবন।
পড়ালেখা, অভিনয়, নাটক লেখা, মঞ্চে সময় দেওয়া, শিক্ষকতা ছিল তার মূল কাজ। অনেক কাজ করতেন। সবই মানুষের জন্য।
তার সঙ্গে আমার খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল। বহু বছর একই নাটকের দল করেছি। একসঙ্গে অভিনয়ও করেছি। তার বাসাকে সবসময় নিজের বাসা মনে হয়েছে। মানুষকে আপন করে নেওয়ার বিশাল শক্তি তার ছিল। কোনো জটিলতা পছন্দ করতেন না।
খুব সরল মানুষ ছিলেন তিনি। সরলভাবেই জীবনযাপন করে গেছেন। তার অপূর্ণতা সহজেই পূরণ হওয়ার নয়।
সুবর্ণা মুস্তাফা
খুবই জ্ঞানী মানুষ ছিলেন ড. ইনামুল হক। আমি তাকে স্যার বলে ডাকতাম। সব বিষয়ে জ্ঞান ছিল তার। আমার বাবার সহকর্মী ছিলেন। একসঙ্গে বহু বছর শিল্পের পথে হেঁটেছেন। ৪ দশকের বেশি সময় অধ্যাপনা করেছেন।
সত্যিকারের ও শতভাগ একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন তিনি। একদিকে শিক্ষকতা করে আলো ছড়িয়েছেন শিক্ষার্থীদের মাঝে, অন্যদিকে মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে আলো ছড়িয়েছেন নাট্যকর্মীদের মাঝে।
তিনি ছিলেন আগাগোড়া ভদ্রলোক। কারো সাতেপাঁচে কখনো ছিলেন না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ হিসেবে তার সাহসী ভূমিকা ছিল, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহমান থাকবে।
Comments