যত ভিউ তত টাকা এটা শিল্পের জন্য ক্ষতিকর: চঞ্চল চৌধুরী

চঞ্চল চৌধুরী। স্টার ফাইল ফটো

বলা হয়ে থাকে চঞ্চল চৌধুরীর সিনেমা ভাগ্য ভালো। যে সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন, দর্শক মহলে ব্যাপক সাড়া পড়ে । মনপুরা থেকে হাওয়া পর্যন্ত তার ক্যারিয়ার তাই বলে। এছাড়া ওটিটিতেও তিনি দারুণভাবে সফল। দর্শকপ্রিয় এই অভিনেতার শুরুটা মঞ্চ থেকে টেলিভিশন নাটক দিয়ে। যদিও টেলিভিশন নাটক কমিয়ে দিয়েছেন তিনি।

এবার ঈদে তার অভিনীত ২টি ৭ পর্বের নাটক, একটি টেলিফিল্ম এবং ২টি এক ঘণ্টার নাটক প্রচার হবে। টিভি নাটকের নানা বিষয় নিয়ে ২ বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

একজন সন্তান জন্ম নেয় মায়ের গর্ভে। তারপর সেই সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়ে বড় হয় এবং একসময় তার পরিবার, সমাজ ছেড়ে একদিন অনেক দূর যায়। কিন্তু তাই বলে কি তার পরিবার, তার মা-বাবা-ভাই-বোনদের ভুলে যাবে? না। আমিও তেমনি টেলিভিশন নাটক কমিয়ে দিলেও একেবারে ভুলে যাইনি, সরে যাইনি। টেলিভিশন নাটককে আমি এভাবেই দেখি। এতটাই ভালোবাসি। কেননা, ওখান থেকেই আমার উঠে আসা। আমার আজকের সারাদেশ ব্যাপী যত পরিচিত সেটা নাটক দিয়ে।

চঞ্চল চৌধুরী। ছবি: স্টার

কেউ কেউ আমাকে বলেন, এখন তো ওটিটিতে অনেক ভালো ভালো কাজ হচ্ছে, শুধু এখানেই করুন। আমি তো করছি। কিন্তু নাটকও আমাকে টানে, আমাকে ভালোবাসার মায়ায় হাতছানি দিয়ে ডাকে। সেজন্য কম করলেও করি। অনেক দর্শক ও ভক্ত আছেন তারা আমাকে নাটকে দেখতে চান। অনেক বন্ধু আছেন, কাছের পরিচালক, প্রযোজক আছেন, তারাও চান নাটকে অভিনয় করি। সেজন্য ভালো স্ক্রিপ্ট পেলে বছরে অল্প অল্প নাটকে অভিনয় করি।

সত্যি বলতে নাটকের ক্ষেত্রে যদি উত্তোরণ ঘটে, নাটকের সেই আগের মতো বাজেট, সময়, যত্ন সব ফিরে আসে তাহলে বেশি বেশি কেন করব না? অবশ্যই করব। হৃদয়ের টানে যেমন পরিবারের কাছে ছুটে যাই, মায়ের কাছে ছুটে যাই, তেমনি টেলিভিশন নাটকও আমার কাছে হৃদয়ের টান। ওইরকম ভালো কাজ পেলে কেন করব না?

আমাদের এখানে ৭ দিন ধরে নাটক প্রচারের একটা প্রবণতা ঈদের সময়ে শুরু হয়েছে। ৭ দিনে দর্শক টানার মতো যেরকম নাটক, যেরকম গল্প, যে রকম বিনোদন কনটেন্ট দরকার তার কতটুকু আছে? সেই পরিমাণ ভালো পরিচালক ও ভালো বাজেট কি আছে? যদি থাকে তাহলে ভালো। নাটকের পরিচালক সমিতিতে হয়ত ৫০০ বা তারও বেশি সদস্য আছে। কিন্তু নিয়মিত নাটক নির্মাণ করছেন কয়জন? এতগুলো পরিচালকের জন্য কনটেন্ট আছে কি? এটা আমার প্রশ্ন? আমার মতে ৫০ থেকে ১০০ পরিচালক আছে, যারা নিয়মিত নাটক নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত।

আমি বিশ্বাস করি ভালো কাজই টিকে থাকবে। সেজন্য অযত্ন নিয়ে করা কোনো কাজের মাথা ঢুকাই না। একটি সিনেমা করার পর ভাবি পরেরটা আরও ভালো না হলে করব না। আমি দর্শকদের সঙ্গে থাকতে চাই ভালো কাজ দিয়ে। স্কিনে থাকতে গিয়ে ধ্বংস হতে চাই না, তাই ভালো কাজটিই বেছে নেই। এটা আমার দায়বদ্ধতার জায়গা। বছরে দুটি ঈদ আসে, কিছু কাজ করি দর্শকদের চাওয়া থেকে।

মাঝে টেলিভিশনে একেবারেই কাজ কমিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু দর্শকদের কথা ভেবে মাঝে মাঝে ভালো কাজ পেলে করি। দর্শক, বন্ধু, দায় এই তিন থেকে করতেই হয়। তবে, সব কাজ না। ১৫ থেকে ২০ বছর আগে নাটকে যে কোয়ালিটি সম্পন্ন কাজ করেছি, ওটা খুব দরকার। ওখান থেকে মনে হয় সরে যাচ্ছি কেউ কেউ। এটা ভাবা দরকার।  

চঞ্চল চৌধুরী। ছবি: স্টার

একটা সময়ে একজন পরিচালক দিনে ৮ থেকে ১০টি দৃশ্যধারণ করতেন। সেটা বেড়ে যখন ২০ কিংবা ২৫ দৃশ্যে চলে গেল তখন তো কোয়ালিটির জায়গাটাতে বড় একটা পরিবর্তন এলো। একটা সময় একজন পরিচালক পর্ব অনুযায়ী সম্মানী পেতেন। সেখান থেকে এটা যখন কন্ট্রাক এ চলে গেল, তখনই বিপত্তিটা ঘটল? তারপর শুরু হলো একদিনে কত পর্ব নির্মাণ করবেন? এভাবেই ধীরে ধীরে নাটকে যত্নের ছাপ কমতে শুরু করল।

এছাড়া আরেকটি প্রক্রিয়া শুরু হলো ফেসভ্যালু যার আছে তাকে নিয়ে নাটক বানানো। এটাও ক্ষতি করেছে। একটা সময়ে টেলিভিশনে স্ক্রিপ্ট জমা হতো, সেখান থেকে একটি কমিটি বাছাই করার পরই নাটক নির্মাণ শুরু হতো। কিন্তু, সেটা চলে গেল অন্যদের হাতে। এভাবেও নাটকে কোয়ালিটি কমতে শুরু করল।

কিন্তু নাটক আমার প্রাণের জায়গা। আমাদের সবার প্রাণের জায়গা। আমাদের নাটকের রয়েছে গৌরব ও ঐতিহ্য। ছেলেবেলায় কত অপেক্ষা করতাম একটি সাপ্তাহিক বা ধারাবাহিক নাটক দেখার জন্য। রাস্তার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যেত আমাদের দেশের নাটক দেখার জন্য। সেটা একসময় কমে গেল। তারপর ফিরে যে আসেনি তা নয়? আমরাও একটা সময় হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনেছি। তারপর নাটক একটু একটু ভালো জায়গায় গেল। আবার এসে সেটাও হারাল।

এখানে ভিউ বাড়াতে গিয়ে একধরণের সংকট হচ্ছে। যত ভিউ তত টাকা এই ফর্মেটে পড়ে গেছেন অনেকে। এটা ক্ষতিকর। যত ভিউ তত টাকা এটা শিল্পের জন্য ক্ষতিকর।

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

2h ago