‘মৃত্যুর আগে বাঁধটা দেখে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল’

নদী ভাঙনের আতঙ্কে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চিতুলিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা। ছবি: স্টার

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চিতুলিয়াপাড়া গ্রামের খালেক মিয়ার (৮০) বসতবাড়ি কয়েকদিন আগে যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তার যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই।

খালেক বলেন, 'আমার চোখের অবস্থা ভালো না। ঠিকমত দেখতে পারি না। এখন আমি কোথায় যাবো।'

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, 'আগে আমার কৃষিজমি ছিল। নদী সব খেয়ে ফেলেছে। ভাঙ্গন থেকে বাঁচার জন্য বাঁধ নির্মাণের কথা কত বছর ধরেই শুনে আসছি। কোথায় সেই বাঁধ? মৃত্যুর আগে সেটি দেখে যাবার খুব ইচ্ছে ছিল।'

একই গ্রামের রাজ্জাক মিয়া (৭০) জানান, তার বসতবাড়ি এখন নদী ভাঙ্গনের মুখে। একই উপজেলার কোনাবাড়ি চর গ্রামে তার আগের বসতবাড়ি নদীতে ভেঙ্গে যাবার পর তিনি কয়েকবছর আগে এই গ্রামে এসে বাড়ি করেছেন। 

ছবি: স্টার

তিনি বলেন, 'গত কয়েক রাত ধরে আতঙ্কে আমি ঘুমাতে পারছি না। এবারো নদী আমার বাড়ি খেয়ে নিলে আমি সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে যাবো।'

একই গ্রামের আমিন চাকদার জানান, তাদের বসত বাড়ির একাংশ ইতোমধ্যে নদীতে চলে গেছে এবং বাকি যেটুকু আছে সেটুকুও যে কোনো সময় নদীতে চলে যেতে পারে।

শুধু খালেক, রাজ্জাক ও আমিনের বসতবাড়িই নয়, গত এক সপ্তাহের ভাঙ্গনে গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে বলে জানান ওই গ্রামের নূর হোসেন।

এবারের বর্ষার শুরুতেই গ্রামে ভাঙ্গন দেখা দেয় এবং তখন গ্রামের মানুষ নিজেরাই মাটি ভর্তি প্লাস্টিকের বস্তা ফেলে ভাঙ্গন রোধ করার চেষ্টা করেছিল। এরপর ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু তখন তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানান স্থানীয়রা।

গত বছরও নদী ভাঙ্গনে গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে বলে তারা জানান।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন অব্যাহত আছে। নদীর তীরবর্তী গ্রামবাসীরা তাড়াহুড়া করে তাদের ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরানোর চেষ্টা করছেন।

ভূঞাপুরের একজন অধিকার কর্মী অভিজিৎ ঘোষ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত বছর যমুনার ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে নিকটবর্তী কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ি ও ভালকুটিয়া গ্রামের কয়েকশ পরিবার।

প্রতিবছর নদীভাঙনের কারণে মানচিত্রে ছোট হয়ে এলেও ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলো রক্ষা এবং স্থানীয়দের ঘরবাড়ি, জমিজমা বাঁচাতে এখন পর্যন্ত তেমন কিছুই করা হয়নি বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, স্থায়ী বাঁধের দাবির বিষয়ে কোনো উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়।

ভূঞাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান জানান, ওই এলাকায় ভাঙ্গনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করার পর ভাঙনরোধে সেখানে জিইও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।

'স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে,' তিনি যোগ করেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, এবার বর্ষার শুরু থেকেই যমুনা নদী উত্তাল ছিল। ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী, অর্জুনা, গাবসারা ও নিকরাইল-এ ৪টি ইউনিয়নে শতশত বসতবাড়ি, অন্যান্য স্থাপনা এবং বিস্তীর্ণ ফসলি জমি গ্রাস করার পাশাপাশি যমুনার ভয়াবহ ভাঙ্গনে পার্শ্ববর্তী কালিহাতী, সদর ও নাগরপুর উপজেলায়ও বাড়িঘর এবং ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে শতশত পরিবার। 

টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে জানান, ভাঙ্গন রোধে ভূঞাপুরের চিতুলিয়াপাড়ায় ইতোমধ্যেই জরুরি সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

'যেহেতু এই এলাকায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হবে, সেহেতু ওই নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে,' তিনি যোগ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Iran says 'main target' of attack that hit Israel hospital was military site

Iran and Israel traded further air attacks on Thursday as Trump kept the world guessing about whether the US would join Israel's bombardment of Iranian nuclear facilities.

16h ago