ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: নাজুক বাঁধে সাতক্ষীরার ২ উপকূলীয় উপজেলার বাসিন্দারা আতঙ্কে

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং’র প্রভাবে সাতক্ষীরার বেশিরভাগ জায়গায় হালকা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বইছে। বিশেষ করে উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরে ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এই ২ উপজেলার বেড়িবাঁধের বেশিরভাগ নাজুক অবস্থায় থাকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এখানকার বাসিন্দারা।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং’র প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠছে শ্যামনগরের খোলপেটুয়া নদী। ছবিটি আজ সোমবার সকালে বুড়িগোয়ালিনী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং'র প্রভাবে সাতক্ষীরার বেশিরভাগ জায়গায় হালকা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বইছে। বিশেষ করে উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরে ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এই ২ উপজেলার বেড়িবাঁধের বেশিরভাগ নাজুক অবস্থায় থাকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এখানকার বাসিন্দারা।

এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকার খোলপেটুয়া, কপাতোক্ষ ও চুনো নদীতে জোয়ারের পানি বাড়ছে। সতর্ক সংকেত পেয়ে সুন্দরবনের ভেতর থেকে অনেক জেলে লোকালয়ে চলে এসেছেন।

সাতক্ষীরার আশাশুনির উপজেলার একটি দ্বীপ ইউনিয়ন হলো প্রতাপনগর। এর চারদিক নদীবেষ্টিত। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি এ জনপদের বাসিন্দরা। অনেকেই ভিটায় ফিরতে পারেননি এখনো।

সতর্ক সংকেত পেয়ে ইতোমধ্যে সুন্দরবনের ভেতর থেকে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার অনেক জেলে লোকালয়ে চলে এসেছেন। বুড়িগোয়ালিনী এলাকায় বেঁধে রাখা জেলেদের নৌকা। ছবি: সংগৃহীত

এরমধ্যেই সিত্রাং'র জন্য দেওয়া বিপৎসংকেত প্রতাপনগর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের কাছে আতঙ্ক হয়ে এসেছে।  আশাশুনির আনুলিয়া ইউনিয়নেও একই অবস্থা দেখা গেছে। নদীবেষ্টিত এ ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে আছে। আতঙ্কে আছেন শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বাসিন্দারাও। এই ৩ ইউনিয়নের বাঁধের অবস্থাও নাজুক বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানিয়েছেন, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ২৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য যেকোনো ধরনের বিপদ মোকাবিলায় প্রস্তুত আছেন ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও ৮৭টি মেডিকেল টিম। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বাাঁধের জন্য ৮৫ হাজার সিনথেটিক ব্যাগ ও ১২ হাজার জিও ব্যাগ রাখা হয়েছে। সুপেয় পানি, খাবার স্যালাইন ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন কর্মকর্তা ইকবাল হুসাইন চৌধুরী বলছেন, তাদের আওতায় থাকা ৪টি স্টেশন ও ১২টি ক্যাম্পে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে সুন্দরবনের মধ্যে কর্মরত জেলেদের বন বিভাগের ক্যাম্পের আশপাশে কিংবা নিরাপদ জায়গায় থাকতে বলা হয়েছে।

বুড়িগোয়ালিনী এলাকার জেলে রমজান আলী জানান, ঘুর্ণিঝড়ের খবর শুনে তারা অনেকে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় লোকালয়ে ফিরে এসেছেন। 

আশাশুনির প্রতাপনগর গ্রামের হাওলাদারবাড়ি এলাকার আব্দুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে একবার বাঁধ ভেঙে  তারা প্রায় সর্বশান্ত হয়ে গেছেন। আবার বাঁধ ভাঙলে ভিটা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।

নয়াখালি গ্রামের ইশরাদ আলী আশঙ্কা ব্যক্ত করে জানান, তাদের এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধটি যেকোনো সময় ভেঙে প্লাবিত হতে পারে।

প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দাউদ আলীর ভাষ্য, 'ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড কয়েকটি বাঁধ সংস্কার করলেও চুইবাড়িয়া, সনাতনকাটি, রুয়েরবিল, চাকলা ও হরিশখালি এলাকার বাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক।'

শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলাম জানান এই ইউনিয়নের খুটিকাটা, চন্ডীপুর, কামালকাটি ও পূর্ব ঝাপাসহ আর ৪-৫টি জায়গায় বাঁধের অবস্থা খুবই ঝূঁকিপূর্ণ।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিভাগ-২) উপসহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেনের ভাষ্য, তাদের আওতাধীন কামালকাটি, ঝাপালি, চুইবাড়িয়া, বৌদির খেয়াঘাট, নয়াখালি, কাকবাশিয়া, গদাইপুর, রুইয়েরবিল, হরিশখালি ও নাকনাসহ ১৫টি জায়গার বাঁধ কম-বেশি ঝূঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। কুড়িকাউনিয়া এলাকায় বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। তবে তারা সিনথেটিক ও জিও ব্যাগ প্রস্তুত রেখেছেন।   

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিভাগ-১) নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, 'শ্যামনগর এলাকার দুর্গাবাটি এলাকার ৩টি জায়গা ও গাবুরার ৪টি জায়গায় বাঁধের অবস্থা কম-বেশি ঝূঁকিপূর্ণ। তবে সব ধরনের বিপদ মোকাবিলায় আমরা তৈরি আছি।'

Comments