বরগুনা

৫ বছরে ৫০ একর বনভূমি সাগরে বিলীন

এরপর ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসসসহ সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের কারণে সৈকতটিতে ভাঙন দেখা দেয়। ২০১৮ সাল থেকে এ ভাঙন তীব্র হওয়ায় গত ৫ বছরে ওই সৈকতের কমপক্ষে ৫০ একর বনভূমির কমপক্ষে ৬০ হাজার গাছ নষ্ট হয়েছে।
শুভসন্ধ্যা সৈকত
বরগুনার তালতলী উপজেলার শুভসন্ধ্যা সৈকতে গত ৫ বছরে কমপক্ষে ৫০ একর বনভূমি ও ৬০ হাজার গাছ সাগরে বিলীন হয়েছে। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

বরগুনার তালতলী উপজেলার শুভসন্ধ্যা সৈকতে ভাঙনের কারণে গত ৫ বছরে কমপক্ষে ৫০ একর বনভূমি ও ৬০ হাজার গাছ নিশ্চিহ্ন হয়েছে। সৈকতটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিনষ্টের কারণে কমেছে পর্যটকের সংখ্যা।

তালতলী শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগরের তীরে শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতটি গড়ে তোলা হয় ২০১০ সালের দিকে। প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতটিকে সাগরের ভাঙন থেকে রক্ষা করতে বন বিভাগ ১২৫ একর জমিতে ঝাউসহ নানান প্রজাতির লক্ষাধিক গাছ রোপণ করে। এতে সৈকতটির সৌন্দর্য বেড়ে যায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটক আসতে শুরু করেন।

এরপর ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসসসহ সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের কারণে সৈকতটিতে ভাঙন দেখা দেয়। ২০১৮ সাল থেকে এ ভাঙন তীব্র হওয়ায় গত ৫ বছরে ওই সৈকতের কমপক্ষে ৫০ একর বনভূমির কমপক্ষে ৬০ হাজার গাছ নষ্ট হয়েছে।

পর্যটকদের সুবিধার্থে সৈকতে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ইটের রাস্তা নির্মাণ করে। ভাঙনে ওই রাস্তাটির দু-তৃতীয়াংশ সাগরে বিলীন হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হালিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সৈকতটি খুবই আকর্ষণীয়। বন বিভাগ ঝাউ গাছসহ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বাগান তৈরি করায় অনেক পর্যটক আসতেন। শীতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে আসতো।'

শুভসন্ধ্যা সৈকত
সৈকতে ঢেউয়ের ঝাপটায় উপড়ে পড়া মরা গাছ। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

'সাগরের অব্যাহত ভাঙনের কারণে সৈকতের গাছগুলো প্রতি বছরই উপড়ে যাওয়ায় সৈকতের সৌন্দর্য কমে গেছে,' যোগ করেন তিনি।

অপর বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, 'সাগরে পর্যটকদের চলাচলে সুবিধার জন্য ২০১৮ সালের দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ এখানে পাকা রাস্তা নির্মাণ করে। ঢেউয়ের তোড়ে রাস্তাটির বড় অংশ ভেঙে গেছে।'

'এসব কারণে এখন এখানে পর্যটক নেই বললেই চলে।'

সৈকতটিকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করলে এখানে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি বিশাল বনভূমি রক্ষা করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢেউয়ের ঝাপটায় উপড়ে পড়া কয়েক শ মরা গাছ সৈকতে পড়ে আছে।

সেখানে ঘুরতে এসেছিলেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের একজন আবু হেনা মোস্তফা ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৫ সালের দিকে একবার এখানে এসেছিলাম। তখন সৈকতটিতে অনেক গাছপালা ছিল। বিশেষ করে নয়নাভিরাম ঝাউ বাগান ছিল।'

বন বিভাগের তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১২ হাজার ঝাউ গাছ রোপণের মাধ্যমে এখানে বনায়ন শুরু হয়। মাটির ক্ষয়রোধে পর্যায়ক্রমে সৈকতজুড়ে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ রোপণের মাধ্যমে বিশাল বাগান গড়ে তোলা হয়। সাগরের ঢেউয়ের ঝাপটায় প্রতি বছরই বনভূমি সাগরে বিলীন হচ্ছে।'

'২০১৮ সাল থেকে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'গত ৫ বছরে সৈকতের কমপক্ষে ৫০ একর বনভূমির ৬০ হাজার গাছ উপড়ে গিয়ে নষ্ট হয়েছে।'

সৈকতে ঝাউ গাছসহ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির আরও ৫০ হাজার গাছ লাগানোর পরিকল্পনা আছে বলেও জানান তিনি।

Comments