বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়রার ২০ গ্রামসহ ৩০ গ্রাম প্লাবিত

৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে খুলনার ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে খুলনার তিন উপজেলায় অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

এর মধ্যে খুলনার কয়রা উপজেলার তিনটি জায়গার বাঁধ ভেঙে অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ভেসে গেছে শতাধিক চিংড়ির ঘের, ভেঙে গেছে কয়েকশ কাঁচা ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাতে জোয়ারের তীব্র চাপে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সিংহেরকোণা, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বাঁধ ভেঙে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, বাঁধের দুর্বল অংশের ওই তিনটি স্থানে প্রায় ১৫০ মিটার ভেঙে নোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে এলাকা। এ ছাড়া নিম্নাঞ্চল ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার মানুষ রাতভর মেরামত কাজ চালিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি।

মহারাজপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, রোববার রাতে জোয়ারের চাপে ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় প্রায় ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষ নদের পানি ঢুকে পড়েছে। এতে অন্তত দুটি গ্রাম ও কয়েকশ চিংড়ির ঘের তলিয়ে গেছে।

মহেশ্বরীপুরের ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারি বলেন, ইউনিয়নের সিংহেরকোণা এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া নয়ানি এলাকার বাঁধের নিচু জায়গা ছাপিয়ে সারারাত পানি ঢুকেছে। এতে অন্তত ৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অসংখ্য চিংড়ির ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ঝড়ের তাণ্ডব ও ভারী বৃষ্টিতে কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে শতাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে খুলনার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী জানান, তার ইউনিয়নের মাটিয়াভাঙ্গা এলাকায় রাতের জোয়ারে বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। এতে ৫-৭টি গ্রামে নদীর পানি ঢুকেছে। এ ছাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত পাওয়ার পর থেকে স্থানীয় মানুষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে সাথে নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করা হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি স্থানে বাঁধ সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সোমবার দুপুরের জোয়ারের আগে তা মেরামতের চেষ্টা চলছে।

বাঁধ ভেঙে প্লাবিত দাকোপের বিভিন্ন গ্রাম

খুলনার দাকোপ উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার শিবসা ও ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা তলিয়ে যায়।

তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ক্ষিতীশ গোলদার বলেন, একই এলাকায় পাঁচটি পয়েন্ট ভেঙে এখন পানি ঢুকছে। কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় পুরোটা নোনাপানি ঢুকে তলিয়ে গেছে। এলাকাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১ নম্বর পোল্ডারের আওতাভুক্ত।

খুলনার দাকোপ উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে।ছবি: সংগৃহীত

তিনি আরও বলেন, ঢাকি ও শিবসা নদীর মোহনায় কামিনীবাসিয়া পুরাতন পুলিশ ক্যাম্প–সংলগ্ন ওই এলাকায় বেড়িবাঁধের অংশ খুব বেশি দুর্বল ছিল না। তবে বেশ কিছুটা নিচু হওয়ায় জোয়ারের চাপে পানি বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে ভেতরে ঢোকে। এরপর বেড়িবাঁধের পাঁচটি পয়েন্ট ভেঙে যায়।

ছবি: সংগৃহীত

পাইকগাছা উপজেলার গড়াইখালি বেড়িবাঁধ ভেঙে শিবসা নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে গড়াই খালি ইউনিয়নের অন্তত ছয়টি গ্রাম।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ আশরাফুল আলম বলেন, 'কয়রা বাদে অন্যান্য উপজেলার বেড়িবাঁধ অতটা নাজুক নয়। তবে অধিক জলোচ্ছ্বাসে কোনো কোনো জায়গায় বাঁধ উপচে পানি ঢুকেছে। আমরা স্থানীয়দের সহায়তায় বালির বস্তা ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা করছি।

তিনি আরও বলেন, গেল জোয়ারে নদীতে পানি বেড়েছে এবং পানির চাপ খুব বেশি বেড়েছে। তবে ভাটায় আবার পানি কমে যাচ্ছে।

Comments