ফেনী-মিরসরাইয়ে বন্যার্তদের উদ্ধারে যাচ্ছে শত শত নৌকা

বিভিন্ন ব্যক্তি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শত শত ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে রওনা হয়েছেন মিরসরাই ও ফেনীর দিকে। ছবি: সংগৃহীত

তিনদিন ধরে প্রবল বর্ষণ অব্যাহত থাকায় ফেনীর বিভিন্ন নদী ও খালের পানি অস্বাভাবিক বেড়েছে। জেলায় দেখা দিয়েছে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকালে মুহুরী ও ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এরমধ্যে মুহুরী নদীর পানি গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।

ফেনী ও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পানি বাড়লেও নৌকার অভাবে উদ্ধার করা যাচ্ছে না অনেককে। তবে বানভাসিদের উদ্ধারে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শত শত ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে তারা রওনা হয়েছেন মিরসরাই ও ফেনীর দিকে। পতেঙ্গা ও সীতাকুণ্ড থেকেও স্পিডবোট ভাড়া নিয়ে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছেন অনেকে।

পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরাও কাজ করছেন।

চট্টগ্রামের খরস্রোতা নদী পারাপারে যেসব নৌকা ব্যবহৃত হয় সেগুলোই ভাড়া করছেন অনেকে। চট্টগ্রামে অবস্থানরত ফেনীর বাসিন্দারাই এগিয়ে আসছেন বেশি। শুরুতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাদের কাছে ভাড়া বেশি চাওয়া হলেও ছাত্র-জনতার প্রতিনিধিরা পরে নৌকার ভাড়া নির্ধারণ করে দেন। 

চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাসেবক আহমেদ তানভীর বলেন, 'আমরা অভয়মিত্র ঘাট থেকে তিনটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করেছি। পরে সেগুলোকে ক্রেনের মাধ্যমে ট্রাকে তোলা হয়েছে। শুরুতে প্রতিদিনের ভাড়া চাওয়া হয় ৮-১০ হাজার টাকা। এখন সাড়ে ৩-৪ হাজার টাকা ভাড়া ঠিক হয়েছে। ফেনীতে নিতে ট্রাকপ্রতি খরচ পড়ছে সাড়ে ৮ হাজার টাকা।'

ছবি: সংগৃহীত

মিরসরাইয়ের বাসিন্দা ওমর ফারুক ইমন বলেন, 'আমার পৈত্রিক বাড়ি করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার গ্রামে। ফেনী নদীর প্রবল তোড়ে ডুবে গেছে পুরো এলাকা। একতলা সমান পানিও উঠেছে অনেক জায়গায়। রাতে আরও পানি বাড়তে পারে। নৌকার অভাবে সেখানে এখনো অনেকেই আটকে আছেন।'

চট্টগ্রামে ব্যবসারত ফেনীর বাসিন্দা শাখাওয়াত রকি বলেন, 'ফেনী আক্রান্ত। আমরা দমদমা, লস্করহাট, মোটবি, লক্ষ্মীপুর ও শাহপুর এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম চালাব। আমরা বোট ভাড়া করে ট্রাকে নিয়ে যাচ্ছি।'

চট্টগ্রামের সংবাদকর্মী মজুমদার নাজিম জানান, তার ভাতিজা চট্টগ্রামের ভাটিয়ারি থেকে দেড় লাখ টাকায় দুটি বোট কিনেছেন। কুমিল্লার বিভিন্ন স্থান থেকে বানভাসিদের উদ্ধারে এগুলো নিয়ে যাওয়া হবে।

চট্টগ্রামের কমিউনিটি রেসকিউ স্টেশনের কর্মী মো. নাসের বলেন, 'আমরা দুটি বড় ইঞ্জিনচালিত বোট ফেনীর ছাগলনাইয়ায় নিয়ে যাচ্ছি।'

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি 

চট্টগ্রাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের নয় উপজেলায় দুই লাখ পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। ৮৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে তিন হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে নৌকার অভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারছেন না। আমরা মিরসরাই উপজেলায় ৩০টি এবং ফটিকছড়ি এলাকায় ৫টি নৌকায় উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছি।'

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ফটিকছড়ি। এই উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের ১৯ হাজার ৮৫০টি পরিবারের এক লাখ দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। মিরসরাই উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ১২ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার বাসিন্দা পানিবন্দি। এ ছাড়া, সীতাকুণ্ডে ২০ হাজার, পটিয়ায় ২০ হাজার, হাটহাজারীতে তিন হাজার, বোয়ালখালীতে ৭০০, বাঁশখালীতে নয় হাজার এবং রাউজান ও কর্ণফুলীতে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন।

জেলায় এ পর্যন্ত ২০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Banks see sluggish deposit growth as high inflation weighs on savers

Banks have registered sluggish growth in deposits throughout the current fiscal year as elevated inflation and an economic slowdown have squeezed the scope for many to save, even though the interest rate has risen.

14h ago