এখনো উদ্ধারের অপেক্ষায় বাড়ির ছাদে অনেক মানুষ

ফেনীর বন্যাকবলিত এক নারীকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। ছবি: স্টার

আকস্মিক বন্যায় ডুবে গেছে ফেনী। এর মধ্যে সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের সবগুলোই ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। বেশিরভাগ গ্রামই এখন পানির নিচে।

এর আগে, জেলার ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম ও দাগনভূঞার বেশিরভাগ এলাকা পানিতে ডুবে যায়।

ইতোমধ্যে ফেনীর প্রায় ৯২ শতাংশ মোবাইল ফোনের টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি। ফলে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় সেখানকার সঠিত তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে না।

সরেজমিনে ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। সেখানকার মানুষ হয়ে পড়েছেন ভীষণ অসহায়। কতজন পানিবন্দি, আর কতজন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছেন, তার সঠিক কোনো সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। তবে উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

ছবি: স্টার

সদর উপজেলার কালীদহ ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ নাসির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত মঙ্গলবার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ফেনীর মেডিনোভা ক্লিনিকে এসেছিলাম। বাড়িতে যারা ছিল তাদের সঙ্গে সেদিন রাতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পারিনি। গতকাল সকালে দুই ফোন থেকে বহুবার চেষ্টার পর একবার কথা হয়। তারা জানায়, ঘরের ছাউনির কাছাকাছি পানি উঠায় তার ওপরেই আশ্রয় নিয়েছে। এরপর থেকে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।'

ফেনীর কালীদহ ও মোটবি ইউনিয়নে স্বেচ্ছাসেবকরা একাধিক টিমের মাধ্যমে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছেন।

সর্বশেষ আজ শুক্রবার বিকেলে ফেনীর শর্শদি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়।

শর্শদি গ্রামের বাসিন্দা সাফায়েত চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের বাড়ি বেশ উঁচুতে। কখনো চিন্তা করিনি ঘরে পানি ঢুকতে পারে। বন্যা পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ।'

বন্যার কারণে গতকাল বিকেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক স্থবির হয়ে পড়ে। আজ দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লেমুয়া ইউনিয়নের অংশে গিয়ে দেখা যায়, পানি কোথাও গলা সমান উচ্চতায় পৌঁছেছে।

ছবি: স্টার

দূর থেকে একই চিত্র দেখা গেছে ফরহাদনগর ইউনিয়নেও। প্রায় সর্বত্রই প্লাবিত হওয়ায় বাসিন্দারা পাকা বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন।

ফেনীর ধর্মপুর ইউনিয়নও বর্তমানে পানির নিচে। মজলিশপুর গ্রামের বাসিন্দা ওসমান আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের বাড়িতে গলা সমান পানি। আমরা বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছি। বাড়ি থেকে বের হওয়ার কথা কল্পনাই করা যায় না।'

ফেনীর পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নেও একই চিত্র। ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের কাছে পাঁচগাছিয়া বাজার ও আশপাশের এলাকায় পানি কোমর সমান উচ্চতায় পৌঁছেছে। তবে ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে তেমন পানি না থাকায় এখনো যান চলাচল করছে।

বন্যার শুরু থেকেই কাজীরবাগ ইউনিয়নের অবস্থা ছিল সবচেয়ে করুণ। আজ বিকেলে ফেনীর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সর্বনিম্ন পানির উচ্চতাও বুক সমান।

ছবি: স্টার

কাজীরবাগ ইউনিয়নের মধ্য দিয়েই সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ায় ত্রাণ সরবরাহ করছেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পথটিতে পানির স্রোত অনেকটাই তীব্র। এ কারণে মানুষকে সদর হাসপাতালের পর যেতে নিষেধ করছেন সেনা সদস্যরা।

সেখানে কর্মরত সেনা সদস্য এহসান ইলাহী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্বেচ্ছাসেবীসহ যারা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন তারা বাদে কেউই এ পথে যেতে পারবেন না। এখানে স্রোতের গতিবেগ অনেক বেশি।'

ফেনীর ফাজিলপুর ইউনিয়নে বন্যার পানির উঠায় গতকাল দুপুরেই ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গতকালের চেয়েও আজ বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আলম।

আজ দুপুরে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল থেকে পানি আরও বেড়েছে। আমরা স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছি। পানি কমার কোনো লক্ষণ নেই। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। অনেকে আশ্রয়ও নিতে পারেনি। এই মুহূর্তে তাদের কী অবস্থা বলতে পারছি না।'

গতকাল ভোর থেকেই ফেনী জেলার প্রায় সর্বত্র বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Election in Bangladesh

Why are we trying to make the election uncertain?

Those who are working to prevent the election should question themselves as to how the people will be empowered without one.

9h ago