উজানের পানি ও ভারী বৃষ্টিতে লক্ষ্মীপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

উজানের পানি ও ভারী বৃষ্টিতে লক্ষ্মীপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
ছবি: সংগৃহীত

উজান থেকে নেমে আসা পানি ও ভারী বৃষ্টিতে লক্ষ্মীপুরের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ফেনীর পানি লক্ষ্মীপুরে প্রবেশ করছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এতে জেলার সাত লাখ ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ২৩ হাজার ৪০৪ জন।

কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার পানি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি ও চাটখিল উপজেলা হয়ে বীরেন্দ্র খাল দিয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় প্রবেশ করছে।

ফেনীর দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলার পানি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা দিয়ে প্রবেশ করে কবিরহাট ও সদর উপজেলার মধ্য দিয়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ছাগলমারা খাল দিয়ে প্রবেশ করছে।

এছাড়া নোয়াখালী সদর উপজেলার পানি লক্ষ্মীপুর সদর হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে কবিরহাট উপজেলার কয়েকটি গ্রাম।

আজ সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে ভারী বৃষ্টি বিবেচনা করা হয়।

লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলা, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়নের প্রায় প্রত্যেকটি প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি ও বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

ইতোমধ্যে কিছু কিছু এলাকায় দেখা গিয়েছে খাদ্য সংকট। পর্যাপ্ত নৌকার অভাবে পৌঁছায়নি ত্রাণ সহায়তা।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সেলিম মোবাইল ফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, চার দিন ধরে তিনি খায়রুল এনাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে সপরিবারে আছেন।

'পানি বেশি হওয়ায় কেউ ঠিক মতো খোঁজ নিচ্ছে না। খাবারও নেই,' বলেন তিনি।

উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের বাসিন্দা রাবেয়া বেগম বলেন, 'স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ি মান্দারী যাদৈয়া গ্রামে এসেছি। বাবার বাড়িতেও পানি। আশেপাশের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতেও জায়গা নেই। সবাই একসঙ্গে আছি, বাঁচলে সবাই একসঙ্গে বাঁচবো।'

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, 'গত ২৪ ঘণ্টায় লক্ষ্মীপুরের নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি ছয় ইঞ্চি বেড়েছে। রহমতখালী খাল হয়ে অনবরত লক্ষ্মীপুরে পানি ঢুকছে।'

লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান বলেন, 'আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ি রান্না করে পরিবেশন করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গম এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে সহায়তা আসছে।'

জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যার্তদের জন্য নগদ ১৬ লাখ, শিশু খাদ্যের জন্য পাঁচ লাখ, গো খাদ্যের জন্য পাঁচ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। আরও নগদ ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া এক হাজার ১০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে।'

লক্ষ্মীপুরে আশ্রয় কেন্দ্রে বৃদ্ধের মৃত্যু

লক্ষ্মীপুর পৌর এলাকার লাহারকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে আব্দুল মালেক (৭০) নামে একজন মারা গেছেন।

আজ সোমবার সকালে তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে লক্ষ্মীপুরে দুইজনের মৃত্যু হলো। মালেকের বাড়ি সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের লাহারকান্দি গ্রামে। তার বাবা মৃত আব্দুর রাজ্জাক।

তার বড় ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন মুন্না মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, 'ধারণা করছি, ঠান্ডাজনিত কারণে আমার বাবা মারা গেছেন।'

সুরাইয়া জাহান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যা শুরুর পরে গত ২১ আগস্ট রামগতি উপজেলায় বিবি আয়েশা নামে তিন বছর বয়সী একটি শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছিল। আজ সোমবার সকালে আশ্রয় কেন্দ্রে বার্ধক্যজনিত কারণে একজন মারা গেছেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Anatomy of BGB shootings in Rampura

It was 6:14pm on Friday, July 19, 2024. Two Border Guard Bangladesh (BGB) personnel were advancing into Banasree G Block in Dhaka.

21h ago