নোয়াখালীতে বন্যায় ৮৮২টি গবাদি পশুর মৃত্যু, ক্ষতি ৩৬ কোটি টাকা

নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার চরহাজারী গ্রামে একটি খামার। ছবি: আনোয়ারুল হায়দার/স্টার

নোয়াখালীতে বন্যায় গবাদি পশু ও হাঁসমুরগির খামারেও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মারা গেছে ৮৮২টি যার মূল্য ৩৬ কোটি টাকার বেশি। এছাড়া খামার ডুবে গিয়ে মুরগি ও হাঁস মারা গেছে যথাক্রমে ২ লাখ ৯২ হাজার ৯৩০টি ও ৪ হাজার ৯৮৫টি। এতে ক্ষতির পরিমাণ ২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৩০ হাজার।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ক্ষয়ক্ষতির এই হিসাব পাওয়া গেছে।

নোয়াখালীতে নয়টি উপজেলার মধ্যে হাতিয়া ছাড়া অন্য উপজেলাগুলোতে বন্যা হয়। উপজেলাগুলো হলো বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সুবর্ণচর, সদর, চাটখিল, সোনাইমুড়ী ও সেনবাগ। এতে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি গবাদি পশু ও হাঁসমুরগির খামারগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্যা কবলিত আটটি উপজেলার ৭৫ শতাংশ এলাকা পানির নীচে ছিল।

প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, নোয়াখালীতে গবাদি পশুর খামার আছে ২ হাজার ৬২১টি। এসব খামারে গবাদি পশু আছে ৯৮ হাজার ২৪৪টি। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত গরুর সংখ্যা ৬৯ হাজার ৩৭৭টি, মহিষ ৩ হাজার ৭০১টি, ভেড়া ৭ হাজার ১১৭টি, ছাগল ২৭ হাজার ৪০৭টি। এর মধ্যে গরু মারা গেছে ১৬৭টি, মহিষ ৭৯টি, ছাগল ২০৯টি, বেড়া ৪২৭টি। এতে ক্ষতি হয়েছে ৩৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে ১ হাজার ৫১১টি। এতে হাঁস-মুরগি সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ৪ হাজার। মুরগি মারা গেছে ২ লাখ ৯২ হাজার ৯৩০টি। হাঁস মারা যায় ৪ হাজার ৯৮৫টি। এতে ক্ষতি হয়েছে ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এছাড়া পশুপাখির দানাদার খাবার নষ্ট হয়েছে প্রায় ৬০০ টন। এর মূল্য প্রায় ১ কোট ৫৫ লাখ টাকা। এছাড়া বিপুল পরিমাণ খড় ও ঘাস নষ্ট হয়েছে।

বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাসপুর গ্রামের নারী উদ্যোক্তা নামজা আক্তারের খামারে অর্ধশতাধিক গরু রয়েছে। বন্যায় তার খামারে তিন ফুট পানি উঠেছে। তিনি বলেন, ২০ দিনেরও বেশি সময় ধরে তার খামারে পানি জমে আছে। এতে খামারের ১০টি গরু মারা গেছে। বন্যার কারণে এক মাস খামার থেকে দুধ বিক্রি হয়নি। এতে ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

নোয়াখালী সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের দরবেশপুর গ্রামের নারী উদ্যোক্তা বিবি রহিমা বেবী (৫৫) ১৯৯৩ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গবাদি পশু ও মাছ চাষ শুরু করেন। বর্তমান ৪০ একর জমিতে ১০টি মাছের ঘের ও চারটি পুকুর এবং ৬৬০টি হাঁস, ১১টি গরু, ১ হাজার ফাওমি মুরগির খামার গড়ে তুলেন। প্রতি বছর মাছ ও হাঁস-মুরগির খামার থেকে এক কোটি টাকার বেশি আয় হয়। এবারের বন্যায় তার পুকুরের সমস্ত মাছ ও হাঁস-মুরগি ভেসে গেছে।

রহিমা বেবী বলেন, বন্যায় তার এক কোটি টাকার ওপর ক্ষতি হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, চলমান বন্যায় নোয়াখালী জেলার ৮টি উপজেলা ও ৭টি পৌর সভার ৮৫টি ইউনিয়নে প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪৩ কোট ৮৫ লাখ টাকা। এখনো পানি থাকায় অনেকগুলো খামার পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি। এসব খামারের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সহায়তা করার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর তালিকা তৈরি করছে।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

5h ago