‘জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দ্বিমুখী নীতি পরিহার করুন’

উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক দ্বিমুখী নীতি পরিহার করার পাশাপাশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে বাঁচাতে উৎস থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেওয়া বক্তারা।
রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেওয়া বক্তারা। ছবি: স্টার

উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক দ্বিমুখী নীতি পরিহার করার পাশাপাশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে বাঁচাতে উৎস থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেওয়া বক্তারা।

গতকাল রোববার রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে দ্য ডেইলি স্টার ও ইউএসএইডের যৌথ উদ্যোগে 'সেভিং মাদার নেচার, সেভিং আস: দ্য রোল অব ইয়ুথ ইন লিডিং কনজারভেশন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স' শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, 'উন্নত দেশগুলো অভিযোজন ও সহনশীলতা নিয়ে কথা বলে, এবং একই সময়ে তারা অন্যদের চেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করছে'।  

তিনি ব্যক্তি পর্যায়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগের ওপর জোর দিয়ে বলেন, 'নিঃসরণ কমাতে দেশের তরুণদের তাদের নিজ নিজ জীবনযাত্রার দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা (জ্যেষ্ঠরা) জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটিয়েছি। এখন আমরা এই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব তরুণদের হাতে সমর্পণ করছি। এটা সঠিক পন্থা হতে পারে না।'

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তরুণদের উদ্দেশে বলেন, 'আমরা তোমাদের কাছে এমন একটি বিশ্ব রেখে যাচ্ছি, যেখানে ফ্লাইওভার ও বড় বড় অবকাঠামো থাকবে, কিন্তু সেটি বসবাসের জন্য ভালো কোনো জায়গা হবে না।'

তিনি বলেন, 'সুন্দরবন ও শালবন ধ্বংস করার অধিকার কারো নেই, কারণ শুধুমাত্র গাছের চারা রোপণ করে এ ধরনের বন কেউ সৃষ্টি করতে পারবে না।'

তার ভাষ্য, রিসাইক্লিংয়েও জলবায়ুর ক্ষতি হয়। তাই রিসাইক্লিংয়ের চেয়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দেন তিনি।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বিশিষ্ট পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন,  'জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে তরুণদের একইসঙ্গে অধিকার রক্ষা ও জনসচেতনতা তৈরির দায়িত্ব পালন করতে হবে। অধিকার রক্ষার কার্যক্রম ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব হতো না। কর্তৃপক্ষ তখনই মানুষের কথা শোনে যখন সবাই উচ্চকণ্ঠ হয়।'

বৈঠকে অংশ নেওয়া চিকিৎসক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষারের ভাষ্য, বিপদসংকুল পরিবেশ সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ। তা সত্ত্বেও জনসংখ্যা কমানোর দিকে যথেষ্ট পরিমাণ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।

তিনি বলেন, 'আমরা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছি, যা ক্ষতিকর। প্রবৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান অনুঘটকগুলোর একটি। আমাদের পরিবেশবান্ধব উপায়ে ভাবতে হবে এবং দূষণ কমাতে প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেদের জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।'

ইউএসএআইডির ইকোনোমিক গ্রোথ অফিসের পরিচালক মুহাম্মদ এন খান বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে মোকাবিলার জন্য তাদের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানান।

বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিপিআরডি) প্রধান নির্বাহী শামসুদ্দোহা, ব্র্যাকের ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ড সেক্রেটারিয়াটের প্রধান গোলাম রব্বানী, বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের (এফইজেবি) চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম চৌধুরী, যমুনা টিভির বিশেষ সংবাদদাতা মহসীন উল হাকিম, দ্য আর্থের সহ-প্রতিষ্ঠাতা শাকিলা সাত্তার তৃণা, প্রমুখ।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দ্য রাইট কাইন্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জুনায়েদ রাব্বানী।

Comments