বিশ্বের ১ শতাংশ ধনীর কার্বন নিঃসরণ ৬৬ শতাংশ দরিদ্রের চেয়ে বেশি

অক্সফামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধনী এই এক শতাংশ মানুষ নিজেরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, জলবায়ু সহনশীল বাড়িতে বসবাস করলেও, তারা যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করেন, তা অনেক মানুষের দুর্ভোগের কারণ।
কার্বন নিঃসরণ
রয়টার্স ফাইল ফটো

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এক শতাংশ মানুষ ৬৬ শতাংশ দরিদ্র মানুষের সমান কার্বন নিঃসরণ করে থাকেন। আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। 

আজ সোমবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ গবেষণার বরাতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

'জলবায়ু বৈষম্য: ৯৯ শতাংশের গ্রহ' শিরোনামের এই প্রতিবেদনে স্টকহোম এনভায়রনমেন্ট ইনস্টিটিউটের (এসইআই) গবেষণার তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সাত কোটি ৭০ লাখ বিলিয়নিয়ার-মিলিয়নিয়ার ৫১১ কোটি দরিদ্রতম মানুষের চেয়েও বেশি কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। 

এছাড়া, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের ১৬ শতাংশের জন্য যারা দায়ী, তাদের আয় এক লাখ ৪০ হাজার ডলারের বেশি।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কার্বন নিঃসরণ থেকে সৃষ্ট তীব্র গরমের কারণে সারা বিশ্বে ১০ লাখ অতিরিক্ত মানুষ মারা যেতে পারেন।

চলতি মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের কপ-২৮ জলবায়ু সম্মেলনকে সামনে রেখে অক্সফাম এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। 

অক্সফামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এই এক শতাংশ মানুষ নিজেরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, জলবায়ু সহনশীল বাড়িতে বসবাস করলেও, তারা যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করেন, তা অনেক মানুষের দুর্ভোগের কারণ। ২০১৯ সালে নিঃসরণের পরিমাণ ছিল ৫৯০ কোটি টন কার্বন ডাই অক্সাইড। 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ধনী এক শতাংশ মানুষ যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করেছেন, তা থেকে উৎপাদিত তাপ ২০২২ এ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভুট্টা, যুক্তরাষ্ট্রের গম, বাংলাদেশের ধান ও চীনের সয়াবিনের মোট উৎপাদন ধ্বংস করতে সক্ষম। 

দরিদ্র, প্রান্তিক, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, অভিবাসী, নারী ও শিশুরা যারা খোলা আকাশের নিচে কাজ করেন বা ভঙ্গুর বাড়িতে বসবাস করেন, তারা কার্বন নিঃসরণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহান।

প্রতিবেদন মতে, এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষের সঞ্চয়, বিমা বা সামাজিক সুরক্ষা পাওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে তারা অন্যদের চেয়ে বন্যা, খরা, তাপদাহ ও দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আর্থিক ও শারীরিক ঝুঁকিতে থাকেন। 

জাতিসংঘ বলেছে, বৈরি আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর যত মানুষ মারা যান, তাদের ৯১ শতাংশই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বসবাস করেন। 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এক শতাংশ মানুষ বছরে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করেন, বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষের সে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করতে দেড় হাজার বছর লাগবে।
 
অক্সফাম কার্বন নিঃসরণের দিক দিয়ে শীর্ষে থাকা ধনাঢ্য ব্যক্তি ও জীবাশ্ম-ভিত্তিক জ্বালানি ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বড় আকারে কর আরোপের দাবি জানিয়েছে। 

সংস্থাটি জানায়, এক শতাংশ ধনীদের ওপর ৬০ শতাংশ কর আরোপ করা হলে, বছরে ছয় লাখ ৪০ হাজার ডলার তহবিল পাওয়া যাবে, যা জলবায়ু বৈষম্য দূর করতে ও টেকসই জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে কাজে লাগানো যাবে। 

অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাহী পরিচালক অমিতাভ বেহার বলেন, 'ধনীদের ওপর কর আরোপ না করলে তারা আমাদের কাছ থেকে সম্পদ ছিনিয়ে নেবে, গোটা বিশ্বে ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে এবং গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করবে। অস্বাভাবিক সম্পদে কর বসালে আমরা একইসঙ্গে বৈষম্য ও জলবায়ু সংকট থেকে বের হয়ে আসতে পারব। ২১ শতকে সবুজ সুশাসনে বিনিয়োগের জন্য আমরা কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার পেতে পারে, যা আমরা গণতন্ত্রকে বলিষ্ঠ করার কাজেও ব্যবহার করতে পারি।'

Comments

The Daily Star  | English

Egg supplies take a hit

The Tejgaon Egg Merchants’ Association, which delivers about 15 percent of the daily supply of 1 crore eggs in the capital, stopped sales from Sunday night claiming it was to avoid harassment by the government authorities.

5h ago