পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়াতে পিডিবির রিভিউ আপিল
বাল্ক (পাইকারি) বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) রিভিউ আপিল করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, 'আমরা সোমবার বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য বিইআরসিতে একটি আপিল দায়ের করেছি।'
তিনি বলেন, 'প্রস্তাব জমা দেওয়ার আগে বিপিডিবি সরকারের সর্বোচ্চ নীতিগত পর্যায় থেকে অনুমোদন নিয়েছে।'
তিনি আরও জানান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও রিভিউ আপিলের অনুমোদন দিয়েছেন।
বিইআরসি ১৩ অক্টোবর বিপিডিবির বাল্ক বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল যে, সংক্ষুব্ধ পক্ষ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নিয়ন্ত্রকের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার জন্য আপিল প্রস্তাব জমা দিতে পারে।
বিপিডিবির শীর্ষ কর্মকর্তা বলছেন, '৩০ দিনের মেয়াদের সঙ্গে সম্মতি বজায় রেখে আমরা আমাদের পর্যালোচনা আপিল জমা দিয়েছি।'
বিইআরসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তাও বিপিডিবি থেকে আপিল পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, 'বিইআরসি শীর্ষ পর্যায় এখন আপিল প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করছে।'
বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিইআরসি কর্মকর্তা বলেছেন, 'এটা স্পষ্ট নয় যে, বিইআরসি পর্যালোচনার বিষয়ে নতুন করে গণশুনানি করবে, নাকি সরাসরি প্রস্তাবটি গ্রহণ করবে এবং শুনানি ছাড়াই তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে।'
গত ১৩ অক্টোবর বিপিডিবির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় বিইআরসি চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেন, 'বিপিডিবির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে এমন কিছু বেসরকারি কোম্পানি তাদের লেনদেনের তথ্য জমা দেয়নি।'
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'তথ্যের অস্পষ্টতা ছিল। এ কারণেই আমরা ভোক্তাদের ওপর বাল্ক শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব বিশ্লেষণ করিনি।'
তিনি উল্লেখ করেন যে, বিইআরসি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বর্তমান আর্থ-সামাজিক এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। ফলে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত পূর্ববর্তী শুল্ক অনুসারে বিদ্যুতের শুল্ক অপরিবর্তিত রয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপিডিবির বাল্ক বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর সর্বশেষ ১৮ মে গণশুনানি হয়।
বিপিডিবি গণশুনানিতে বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় এবং বিইআরসির একটি প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন কমিটি ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল।
প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে বিপিডিবি কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে, সংস্থাটির বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোকে সরবরাহ করতে ৮৮ হাজার ৯৯৩ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা (ইউনিট) বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ৭৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা রাজস্বের প্রয়োজন হবে।
'কিন্তু বিপিডিবি যদি তার বর্তমান বিদ্যুৎ ৫ দশমিক ১৭ টাকা প্রতি ইউনিট দরে বিক্রি করে, তাহলে ২০২২ সালের ক্যালেন্ডার বছরে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতির সম্মুখীন হবে। তাই বিপিডিবিকে বিদ্যুতের দাম ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে।'
শুনানিতে বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ৫ দশমিক ১৭ টাকা থেকে মূল্য বাড়িয়ে ইউনিট প্রতি ৮ দশমিক ৫৬ টাকা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারের ভর্তুকি ছাড়াই হিসাব করা হয়েছে।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবল চাপে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অনেক বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকদের কাছে কম দামে বিক্রি করায় বিপিডিবি ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
গত ১৮ মে এর গণশুনানিতে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থার প্রতিনিধিসহ ভোক্তা অধিকার গোষ্ঠীগুলো এই মুহূর্তে বিদ্যুতের শুল্কের যে কোনো বড় বৃদ্ধির তীব্র বিরোধিতা করেছে। কারণ মানুষ ইতোমধ্যেই উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে।
তারা প্রস্তাবটিকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে বলেন, অদক্ষ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উচ্চ হারে বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অনৈতিক চর্চা মোকাবিলার মাধ্যমে বিপিডিবি তার রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করতে পারে।
Comments