জ্বালানি তেল সরবরাহে প্রস্তুত ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’
দেশের জ্বালানি সেক্টরে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হতে যাচ্ছে। ভারতের আসাম রাজ্যের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপো পর্যন্ত ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ জ্বালানি তেলের পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে।
এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে ডিজেল আমদানি করা হবে।
আগামী ১৮ মার্চ কমিশনিং হতে যাচ্ছে 'ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন (আইবিএফপিএল)'। দুই দেশের সরকার প্রধান আনুষ্ঠানিকভাবে এই পাইপলাইনের কমিশনিং করার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই পাইপলাইন চালু হলে দেশের উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেল পরিবহন নিয়ে আর বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি)। 'ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন' কমিশনিংয়ের পর প্রথম বছর আড়াই লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত ডিজেল আমদানি করা হবে। পর্যায়ক্রমে প্রতি বছর ডিজেল আমদানির পরিমাণ বাড়ানো হবে। ১০ ইঞ্চি ব্যাসের এই পাইপলাইন দিয়ে বছরে সর্বোচ্চ ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
এ প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী আগামী ১৮ মার্চ 'ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন' আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনিং করবেন।
তিনি আরও বলেন, ভারত সরকার এই পাইপলাইনের অবকাঠামো নির্মাণ করে দিয়েছে। আর আমরা পাইপলাইনের জন্য ভূমি বরাদ্দ এবং রিসিভ ট্যাংক নির্মাণ করেছি।
বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার এবং ভারত অংশে ৫ কিলোমিটার পাইপ স্থাপন করা হয়েছে। পথিমধ্যে ৫টি এসভি স্টেশন এবং পার্বতীপুরে রিসিপট টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহ ও পরিচালন ব্যবস্থা আধুনিক, যুগোপযোগী এবং সহজতর হবে। জ্বালানি তেল পরিবহণ ব্যয় ও সময় সাশ্রয় হবে। প্রতিকূল পরিবেশেও সরবরাহ ও পরিচালন ব্যবস্থা নিশ্চিত ও নির্বিঘ্ন হবে। খুলনা ও চট্টগ্রাম থেকে রেল ওয়াগনের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলে তেল পরিবহণের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাজনিত কারণে ওয়াগন থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের সরবরাহ নিশ্চিত হলে পরিবেশ দূষণ হ্রাস পাবে এবং ক্ষতির পরিমাণ কমবে।
বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, পাইপলাইন স্থাপনে ভারতের বিনিয়োগ প্রায় ৩৪৬ কোটি রুপি এবং জমি অধিগ্রহণ ও রিসিভ ট্যাংক নির্মাণে বিপিসি বিনিয়োগ করেছে প্রায় ৩০৬ কোটি টাকা।
ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনে যুক্ত পার্বতীপুরের তিনটি তেল বিপণন কোম্পানির স্থাপনা থেকে প্রতিদিন এক হাজার মেট্রিক টন ডিজেল উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনটি ভারতের আসাম রাজ্যের নুমালিগড় রিফাইনারির শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে পঞ্চগড়, নীলফামারী, দিনাজপুর হয়ে পার্বতীপুর ডিপোতে সংযুক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে 'ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন' প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক টিপু সুলতান ডেইলি স্টারকে বলেন, এই পাইপলাইন দিয়ে জ্বালানি তেল পরিবহণের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষা।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ভারতের আসাম রাজ্যের নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ শুভেচ্ছা নিদর্শন হিসেবে দুই হাজার ২৬৮ মেট্রিক টন ডিজেল পাঠানো হয় পার্বতীপুর ডিপোতে। এরপর থেকে রেল ওয়াগনে করে নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত ডিজেল আমদানি হচ্ছে।
Comments