বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রির টাকায় আদানি পাওয়ারের ‘পোয়া বারো’

আদানি পাওয়ার
আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড। ছবি: আসিফুর রহমান/ স্টার ফাইল ফটো

ভারতের আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ কেনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে প্রতিষ্ঠানটির প্রচুর মুনাফা হয়েছে।

২০১৭ সালের নভেম্বরে বিশ্লেষকদের সমালোচনার মুখে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আমদানির জন্য আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে চুক্তি করে। বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, এর ফলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটিই বেশি লাভবান হবে।

ভারতের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরে আদানি পাওয়ারের আয় ৪০ শতাংশ বেড়ে ৩৭ হাজার ১৭৩ কোটি রুপি (৪৮ হাজার ৯১১ কোটি টাকা) হয়। ঝাড়খণ্ড ইউনিট থেকে আয় হয়েছে পাঁচ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। এটি মোট আয়ের ১৪ দশমিক তিন শতাংশ।

এভাবে নয় মাসে আদানি পাওয়ারের মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩০ শতাংশ বেড়ে ১৮ হাজার ৯২ কোটি রুপিতে (২৩ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা) দাঁড়িয়েছে।

বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ও দেশটির উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারতের দিকে ঝুঁকে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, আদানির সঙ্গে যখন চুক্তি হয় তখন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১২ হাজার ৯২২ মেগাওয়াট এবং সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল নয় হাজার ৫০৭ মেগাওয়াট।

গত এপ্রিলে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা জেলায় আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে।

গত সপ্তাহে আদানি পাওয়ারের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা শৈলেশ সাওয়া বলেন যে তৃতীয় প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যুৎ বিক্রি বেড়েছে।

গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে আদানি পাওয়ারের আয় এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭২ শতাংশ বেড়ে ১৩ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা হয়েছে। এই সময়ে মুনাফা নয় কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।

প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য—বেশি আয় ও সেই তুলনায় খরচ কম হওয়ায় এত মুনাফা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, গোড্ডা প্ল্যান্ট চালু হওয়ার পর পরিচালন ক্ষমতা ও বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এবং আমদানি করা জ্বালানি পণ্যের দাম কম হওয়ায় তাদের আয় বেড়েছে।

গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে তৃতীয় প্রান্তিকে আদানি পাওয়ারের আয়ের খাতায় যোগ হয়েছে এক হাজার ৮২৪ কোটি রুপি।

প্রতিষ্ঠানটি ইবিআইটিডিএ (সুদ, কর, অবচয় ও পরিশোধনের আগে আয়) সেই প্রান্তিকে এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪২ শতাংশ বেড়ে পাঁচ হাজার ৫৯ কোটি রুপি হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনের কাজ কতটা ভালোভাবে পরিচালিত হচ্ছে তা ইবিআইটিডিএর মাধ্যমে জানা যায়।

জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আদানি পাওয়ারের আয় ৬১ শতাংশ বেড়ে ১২ হাজার ১৫৫ কোটি রুপি হয়। গোড্ডা প্ল্যান্ট থেকে আসে দুই হাজার ৩৪ কোটি রুপি।

প্রথম প্রান্তিকে গোড্ডা প্ল্যান্ট থেকে আয় হয় এক হাজার ৪৬৮ কোটি রুপি।

শৈলেশ সাওয়া আরও জানান—গোড্ডা প্ল্যান্ট ছাড়াও মুন্দ্রা, উদুপি, রায়পুর ও মহন প্ল্যান্ট থেকেও ভালো আয় হয়েছে।

তিনি বলেন, আমদানি করা কয়লার দাম কমে হওয়ায় তা মুন্দ্রা ও উদুপি প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়তা করেছে। ভারতের প্রধান কয়লা উৎপাদন কেন্দ্রের কাছাকাছি হওয়ায় আদানি পাওয়ার এর সুবিধা পাচ্ছে।

'এর পাশাপাশি বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সর্বাধিক লাভের সুযোগ তৈরি হয়েছে,' বলে মনে করেন তিনি।

গোড্ডা থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আসছে ভারতের ভেতরে প্রায় ১০৬ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে।

গত বছরের ৪ এপ্রিল বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরুর পর ৩০ জুন পর্যন্ত তিন মাসে প্রতিষ্ঠানটি ১৫৯ কোটি ৮০ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন (কিলোওয়াট-ঘণ্টা) করেছে। বাংলাদেশি মুদ্রার হিসাবে প্রতি ইউনিটে খরচ হয়েছে ১৪ টাকা দুই পয়সা।

Comments

The Daily Star  | English

'Frustrated, Yunus hints at quitting'

Frustrated over recent developments, Chief Adviser Prof Muhammad Yunus is considering stepping down, said sources familiar with what went down at the Chief Adviser’s Office and Jamuna yesterday.

2h ago