ভাগাড়ের ময়লা করতোয়া নদীতে ফেলছে গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা

ভাগাড়ের সব আবর্জনা ড্রাম ট্রাকে করে করতোয়া নদীতে ফেলছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা।
ছবি: মোস্তফা সবুজ/ স্টার

বাংলাদেশের সব নদীকেই ২০১৯ সালে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। অথচ ভাগাড়ের সব আবর্জনা ড্রাম ট্রাকে করে করতোয়া নদীতে ফেলছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা।

আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক সড়কের ভাঙ্গারমোড় ব্রিজের কাছে এই চিত্র দেখা যায়।

গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার একটি ড্রাম ট্রাক মৃতপ্রায় করতোয়া নদীতে ভাগাড় থেকে সংগ্রহ করা ময়লা-আবর্জনা ফেলছে দেখে এই প্রতিবেদক কথা বলেন ট্রাকটির চালকের সঙ্গে।

চালক বলেন, 'আসলে পৌরসভার নিজস্ব ডাম্পিং স্টেশন আছে। কিন্তু সেখানে কম্পোস্ট সার তৈরি হচ্ছে। সে কারণে কয়েকদিন হলো এখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে।'

বিষয়টি নিয়ে গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. মুকিতুর রহমান রাফি দ্য ডেইলি স্টারকে প্রথমে বলেন, 'করতোয়া নদীতে ময়লা ফেলা হচ্ছে না। ওখানে ব্রিজের পাশে একটি হুইল (গাইড) ওয়াল আছে। তার নিচে থেকে মাটি সরে গেছে ফলে এলাকার লোকজনের অনুরোধে সেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে।'

সরকারি প্রতিষ্ঠান কেন নদীতে ময়লা ফেলছে জানতে চাইলে মেয়র রাফি বলেন, 'আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে আছি। মিটিং শেষ করে এই বিষয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলছি।'

ছবি: মোস্তফা সবুজ/ স্টার

এর ৩০ মিনিট পর মেয়র রাফি ফোন করে বলেন, 'প্রথমত ওখানে কোনো নদীই নেই। দ্বিতীয়ত নদীতে কোনো ময়লা ফেলা হচ্ছে না। যদি ফেলা হয় বিষয়টি আমি দেখছি।'

২০১৫ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) বগুড়া এবং গাইবান্ধায় অবস্থিত ১১৬ কিলোমিটার করতোয়া নদীর দখল-দূষণ এবং বর্ষা মৌসুমে নদীর প্রবাহ ধরে সীমানা নির্ধারণের জন্য ২০টি সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির বিরুদ্ধে রিট করে।

ওই রিটের একজন বিবাদী করা হয়েছিল গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। রিটে শোকজ নোটিশ ছাড়াও হাইকোর্টের কিছু নির্দেশনা ছিল বিবাদীদের জন্য। তার মধ্যে একটি হলো পৌরসভার কোনো আবর্জনা নদীতে ফেলা যাবে না এবং বগুড়া এবং গাইবান্ধায় ১১৬ কিলোমিটার নদীর পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে।

বিষয়টি জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসেন বলেন, 'নদীতে পৌরসভা ময়লা ফেলছে বলে জানি না। বিষয়টি নিয়ে মেয়রের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেব।'

এ বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দূষণের বিষয়টি আমরা দেখি না। তবে নদীকে বাঁচাতে হলে সবার সচেতনতা সবার আগে দরকার।'

ছবি: মোস্তফা সবুজ/ স্টার

গোবিন্দগঞ্জ শহরকে বন্যার কবল থেকে রক্ষার জন্য ১৯৯৬ সালে গোবিন্দগঞ্জ ভাঙ্গাব্রিজের অদূরে খুলশী গ্রামে মূল করতোয়ার মুখে ৩ দরজার একটি সুইচ গেট নির্মাণ করে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এর ফলে বগুড়ার এই শাখা করতোয়া ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। সুইচ গেটের মুখে কয়েক মিটার বালি জমে পানির উৎস বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে করতোয়ার এই ১২২ কিলোমিটার অংশে বছরের ৯ মাস কোনো পানি থাকে না।

গত ১১ এপ্রিল খুলশী ত্রি-ভেন্ট রেগুলেটর পরিদর্শনকালে বেলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'পানি উন্নয়ন বোর্ডের মনস্তত্ত্বই হলো বাঁধ, সুইচ গেট দিয়ে নদীর পানিকে নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু প্রকৃতিকে তো আসলে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। করলে মরে যায়। এই বাঁধ দেওয়া বা নিয়ন্ত্রণ করার পরিণতি বগুড়া-গাইবান্ধার এই মরা করতোয়া।'

Comments