নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার, অসুস্থ হয়ে পড়েছে বিপন্ন শকুন

ঈগল ভেবে শকুন নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা
ঈগল ভেবে শকুন নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা। ছবি: সংগৃহীত

হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনে ঈগল ভেবে একটি জীবন্ত শকুন নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চলছিল।

গত ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার মওকা গ্রাম থেকে বিপন্ন প্রজাতির ওই শকুনটি উদ্ধার করেন জেলা বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

তবে নির্বাচনী প্রচারণা কর্মসূচিতে সারাদিন ধরে টানা-হেঁচড়া করায় শকুনটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এটিকে দীর্ঘদিন খাবারও দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। বর্তমানে শকুনটি বনবিভাগের অফিসে চিকিৎসাধীন।

স্থানীয়রা জানান, গত ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বানিয়াচং উপজেলার ৬ কাগাপাশা ইউনিয়নের মোকার হাওরের এলকা বাসিন্দাদের হাতে ধরা পড়ে বিরল প্রজাতির এই শকুন।

বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে পাখিটিকে দেখতে বিপুল সংখ্যক মানুষ ভিড় জমায়। পরে ঈগল প্রতীকের সমর্থকরা ঈগল পাখি ভেবে এটিকে নিয়ে প্রচারণা চালায়।

ঘটনাটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। এর দুদিন পর জেলা বন বিভাগের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে শকুনটিকে উদ্ধার করে।

জানতে চাইলে বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, 'এটি হিমালয় থেকে আসা একটি বিরল প্রজাতির শকুন। পাখিটি বর্তমানে অসুস্থ। পুরোপুরি সুস্থ হলে ছেড়ে দেওয়া হবে।'

বহুদিন ধরে শকুনটিকে কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। এ কারণে না খেয়ে এটি দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে জানান উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাইফুর রহমান।

নির্বাচনী প্রচারণায় শকুন ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল মার্কা) আব্দুল মজিদ খান বলেন, 'বিষয়টি আমি জানি না। এই প্রাণীটিকে নিয়ে কেউ প্রচারণা চালালে তিনি নিজ দায়িত্বে তা করেছেন। এর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।'

সিলেটের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সাবেক সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের দেশে শকুন অত্যন্ত বিপন্ন প্রাণী। আমাদের প্রকৃতি এবং পরিবেশের জন্য এর অনেক প্রয়োজন। ২০১৫-১৬ সালের গণনা অনুযায়ী, দেশে শকুনের সংখ্যা ২৬০টি। এরপর আর শকুন শুমারি হয়নি। তবে ভবিষ্যতে এটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'দেশের বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে এখনো শকুন ভালো আছে। প্রকৃতির এই পরিচ্ছন্নতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে গবাদিপশুর জন্য নিষিদ্ধ ব্যথানাশক ওষুধ বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। চা বাগানসহ বিভিন্ন স্থানের উঁচু গাছ কাটা যাবে না। তবেই এই উপকারী পাখির সংখ্যা আগের স্তরে ফিরে আসতে পারে।'

'নির্বাচনী প্রচারণায় শকুন ব্যবহারের ঘটনাটি আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Effective tariff for RMG exports to US climbs to 36.5%: BGMEA

The tariff will be a bit less if 20% of the cotton used in garment production is sourced from the USA

46m ago