‘রৌদ্রের আকাশে’ পাহাড়ি নীলকণ্ঠ

ছবিতে যে নীলকণ্ঠ পাখিটি দেখা যাচ্ছে, তা পরিচিতি পাহাড়ি নীলকণ্ঠ নামে। অনেকে ডাকেন পাহাড়ি নীলকান্ত। সম্ভবত নীলের আভা ছড়ানো শরীরের কারণেই এমন নামকরণ।
‘যত নীলকণ্ঠ পাখি উড়ে গেছে রৌদ্রের আকাশে,/নদীর ও নগরীর/মানুষের প্রতিশ্রুতির পথে যত/নিরুপম সূর্যালোক জ্ব’লে গেছে—তার/ঋণ শোধ করে দিতে গিয়ে এই অনন্ত রৌদ্রের অন্ধকার।’
ছবি: তিমু হোসেন

'যত নীলকণ্ঠ পাখি উড়ে গেছে রৌদ্রের আকাশে,/নদীর ও নগরীর/মানুষের প্রতিশ্রুতির পথে যত/নিরুপম সূর্যালোক জ্ব'লে গেছে—তার/ঋণ শোধ করে দিতে গিয়ে এই অনন্ত রৌদ্রের অন্ধকার।'—জীবনানন্দ দাশ

'নাবিকী' শিরোনামের কবিতার এই লাইনগুলোতে 'নীলকণ্ঠ' জীবনানন্দ ঠিক কোন প্রজাতির নীলকণ্ঠকে হাজির করেছেন সেটা আন্দাজ করাটা কঠিন। কারণ পাখি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এই বাংলা অঞ্চলে অন্তত তিন ধরনের নীলকণ্ঠ পাখির দেখা মেলে।

তবে ছবিতে যে নীলকণ্ঠ পাখিটি দেখা যাচ্ছে, তা পরিচিতি পাহাড়ি নীলকণ্ঠ নামে। অনেকে ডাকেন পাহাড়ি নীলকান্ত। সম্ভবত নীলের আভা ছড়ানো শরীরের কারণেই এমন নামকরণ।

পাহাড়ি নীলকণ্ঠ বাংলাদেশের এক বিরল আবাসিক পাখি। ইংরেজি নাম ওরিয়েন্টাল ডলারবার্ড। এর ডানার নিচে আছে গোলাকার রুপালি ছোপ; যা অনেকটা আমেরিকান সিলভার ডলার কয়েনের মতো। এ থেকেই এই নামের উৎপত্তি। পাখিটি করাটিডি পরিবারের অন্তর্গত। প্রধানত পাওয়া যায় এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং ওশেনিয়ার কিছু দ্বীপপুঞ্জে। বৈজ্ঞানিক নাম ইউরিসতোমাস ওরিয়েন্টালিস।

ছবি: তিমু হোসেন

পাখি ও বন্য প্রাণী চিকিৎসাবিশেষজ্ঞ আ ন ম আমিনুর রহমান জানাচ্ছেন, পাহাড়ি নীলকণ্ঠ চিরসবুজ বন ও বনের প্রান্তে বাস করে। সাধারণত একাকী বা জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। গাছের পাতাবিহীন মগডালে বা বৈদ্যুতিক তারে বসে থাকে। হঠাৎ উড়ে এসে পোকামাকড় ধরে আবার ডালে বা তারে ফিরে যায়। সাধারণত 'ক্যাঁক-ক্যাঁক-ক্যাঁক' স্বরে ডাকে।

বাংলাদেশে মূলত চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি চিরসবুজ বনে দেখা যায় এদের। তবে সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনেও মাঝেমধ্যে দেখা মেলে।

পাহাড়ি নীলকণ্ঠের প্রজননকাল মার্চ থেকে জুন। এ সময় এরা গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বানিয়ে তাতে তিন-চারটি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১৭-২০ দিনে। বাচ্চারা উড়তে শেখে প্রায় এক মাস বয়সে।

মাঝারি আকারের এই পাখির গলায় নীলচে আভা। বুক-পেট ও ডানা সবুজাভ নীল। দৈর্ঘ্য ২৬-৩১ সেমি; ওজন ১২৩-১৫০ গ্রাম। দেহের ওপরটা কালচে নীল। ওড়ার সময় ডানার নিচে রুপালি ডিম্বাকৃতির ছোপ দেখা যায়। ঠোঁট ও পা গোলাপি-লাল। স্ত্রী-পুরুষের চেহারা একই রকম। তবে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চাগুলোর ঠোঁটের রঙ অনুজ্জ্বল।

সম্প্রতি হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে পাহাড়ি নীলকণ্ঠের ছবিগুলো তুলেছেন তিমু হোসেন

Comments

The Daily Star  | English

AC technicians facing backlog of installation, repair orders

Ferdous Hasan, who lives in the Motijheel area of Dhaka, recently purchased an air conditioner (AC) in a bid to find some respite from the ongoing heatwave sweeping across Bangladesh. However, he has been left frustrated by a prolonged delay in installation.

19m ago