সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান

বেপরোয়া গতির যানে বনের সড়ক যেন মরণফাঁদ

সাতছ‌ড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেত‌রে মাই‌ক্রোবাস চাপায় মারা যাওয়া হনুমা‌ন শাবকের পাশে বসে আছে মা হনুমান। ছবি: সংগৃহীত

২০ মে। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া পুরোনো ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দ্রুতগতির মাইক্রোবাসের চাপায় মারা যায় একটি মুখপোড়া হনুমানের বাচ্চা।

পরবর্তীতে মৃত শাবকের পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে দেখা যায় মা হনুমানটিকে; যে দৃশ্য নাড়া দিয়ে যায় পথচলতি মানুষ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। কিন্তু বন কর্মকর্তারা এখনো শাবকটিকে চাপা দেওয়া মাইক্রোবাসটি শনাক্ত করতে পারেনি।

স্থানীয় বাসিন্দা মিফতাউল ইসলামের ভাষ্য, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া এই সড়কটিতে এমন দুর্ঘটনা এখন খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। হনুমান শাবকটির মতো প্রায়ই বেপরোয়া গতির যানবাহনের নিচে চাপা পড়ে মারা যাচ্ছে সাপ, মায়া হরিণসহ অন্যান্য বণ্যপ্রাণী।

৬০০ একরের এই সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানটিকে জীববৈচিত্র্যের আধার বলে ধরা হয়। এখানে ১৯৭ প্রজাতির প্রাণী, সরীসৃপ ও পাখির বসবাস, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিও রয়েছে।

এই উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-সিলেট পুরোনো মহাসড়ক। যে সড়কটি চুনারুঘাট উপজেলা সদর হয়ে জেলার মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর হয়ে ঢাকা-সিলেট মূল মহাসড়কের সঙ্গে মিশেছে।

বনের সড়কে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে নির্বিচারে এমন মৃত্যু রোধের জন্য সংরক্ষণবাদীদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, কঠোর নজরদারি এবং নিয়মের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এই সড়ক দিয়ে এখনো বালু ও পাথরবোঝাই ভারী ট্রাকগুলো প্রায়ই নির্ধারিত গতিসীমা (ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার) অতিক্রম করে চলাচল করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মোবিন মিয়া দাবি, এই সড়কে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে প্রতি মাসে গড়ে ১০-১২টি বন্যপ্রাণী মারা যায়।

গাড়িচালক সাদ্দাম হোসেনের ভাষ্য, 'সাতছড়ির অন্য সব রাস্তা খারাপ অবস্থায় থাকলেও এই রাস্তাটি ভালো। এ কারণে চালকরা প্রায়শই এই রাস্তা ব্যবহার করতে পছন্দ করেন এবং দ্রুত গতিতে গাড়ি চালান।'

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, চালকদের সতর্ক করার জন্য পর্যাপ্ত সড়ক সংকেত এই সড়কে নেই এবং খুব কমসংখ্যক চালকই গতিসীমা মেনে চলেন।

এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শোয়েব চৌধুরী বন বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো ওপর জোর দেন। একইসঙ্গে তিনি যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করে সুরক্ষা পদক্ষেপের পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ, চালকদের মধ্যে প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতি তৈরির জন্য জনসচেতনতামূলক প্রচারণা এবং সড়কে প্রাণী মৃত্যুর ঘটনার একটি ডেটাবেস সংরক্ষণের তাগিদ দেন।

যোগাযোগ করা হলে সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'আমাদের কাছে সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এটা সত্যি যে, দ্রুতগতির গাড়ির কারণে অনেক প্রাণী মারা যাচ্ছে।'

জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, 'দুর্ভাগ্যবশত সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী এখানে স্পিড ব্রেকার নির্মাণের অনুমতি নেই, ফলে এ ধরনের ঘটনা কমানো কঠিন।

'আমরা সম্ভাব্য সমাধান খুঁজছি এবং আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে কী করা যায়, তা জানতে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করব।'

বিষয়টি নিয়ে হবিগঞ্জের সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, 'আমরা বনের এলাকায় সাইন বোর্ড স্থাপন করেছি, যা চালকদের গতি কমাতে এবং হর্ন বাজানো এড়াতে উৎসাহিত করবে।'

জাকির হোসেনের বক্তব্য, 'আমাদের স্পিড ব্রেকার স্থাপনের বিষয়ে নির্দিষ্ট নীতি রয়েছে। বন বিভাগ এই বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পরামর্শ বা যোগাযোগ করেনি। তারা যোগাযোগ করলে আমরা অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখব।'

Comments

The Daily Star  | English

Fakhrul welcomes election timeline set by interim govt

This meeting has truly become a turning point, says the BNP spokesperson

42m ago