রত্নাই নদীর বুকে বোরো চাষ
লালমনিরহাট সদর ও আদিতমারী উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত রত্নাই নদী। ছোট এই নদীটি বর্ষায় বেশ প্রশস্ত হয়। প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রত্নাইয়ের বুকে ৬০০ হেক্টর জমিতে রোপণ করা হয়েছে বোরো ধান।
নদীর তীরবর্তী কৃষকরা নদীর বুকে ধান চাষ করেছেন। গত কয়েকবছর ধরে কৃষকরা নদীর বুকে কম খরচে বোরো ধান চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বনগ্রাম এলাকার কৃষক সুরেশ চন্দ্র বর্মণের (৬৭) রত্নাই নদীর বুকে প্রায় ৮ বিঘা জমি আছে বলে দাবি করেছেন। এ বছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে বোরোর চারা রোপণ করেছেন। আগের বছরগুলোয় ২-৩ বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করেছিলেন।
লালমনিরহাট সদরের দুড়াকুটি এলাকার কৃষক চান মিয়া (৬৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক যুগ আগেও রত্নাইয়ে সারাবছর পানিপ্রবাহ ছিল। এখনো প্রবাহ আছে, তবে কম। আগে নদীর বুকে ফসল ফলাতে পারতাম না। গত কয়েকবছর ধরে নদীর বুকে বোরো ফলাতে পারছি।'
স্থানীয় কৃষকদের জমি ভেঙে নদীতে গেছে এবং কৃষকরা তাদের জমি চিহ্নিত করে বোরো ধান ফলাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এ বছর রত্নাইয়ের বুকে প্রায় ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করেছি। গত বছরগুলোয় ২ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছিলাম। বাম্পার ফলন হয়েছিল।'
আদিতমারী উপজেলার শালমারা এলাকার কৃষক নবীন চন্দ্র বর্মণ (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রত্নাইয়ে এখন পানিপ্রবাহ সামান্য। এ বছর ২ বিঘা জমিতে বোরোর চারা রোপণ করেছি। নদীর বুকে বোরো উৎপন্ন করতে সেচের পানি লাগে না। সার-কীটনাশকও ব্যবহার করতে হয় না।'
নদীর জমিতে পলি থাকায় ফসলের বাম্পার ফলন হয় বলে জানান তিনি।
একই এলাকার কৃষক নাদের আলী (৫৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীর বুকে জমিগুলো সমান্তরাল নয়। তাই খণ্ডখণ্ডভাবে জমি প্রস্তুত করে বোরো চাষ করেছি। গত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর রত্নাইয়ের বুকে দ্বিগুণ জমিতে বোরোর চারা রোপণ করা হয়েছে।'
নদীর বুকে প্রতি বিঘা জমি থেকে ২০-২৫ মণ ধানের উৎপাদন হয় বলে তিনি জানান।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রত্নাইয়ের বুক জুড়ে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। আগের বছরগুলোতেও নদীর জমিতে বোরো উৎপন্ন হয়েছিল, তবে জমির পরিমাণ কম ছিল।'
'এ বছর কৃষকরা নদীর বুকে লাগানো বোরোর বাম্পার ফলন পাবেন' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'নদীর বুকে জমিতে বোরোর উৎপাদন বাড়তি খাদ্য হিসেবে যোগ হয়।'
Comments