প্লাস্টিক দূষণ: সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতায় সমাধান

‘প্লাস্টিক দূষণ দূর করো’
বহুল ব্যবহৃত প্লাস্টিকে তৈরি পলিথিন ব্যাগ দূষণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। ছবি: স্টার ফাইল ছবি

প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। এ বছর এই দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় 'প্লাস্টিক দূষণ দূর করো'।

প্লাস্টিক কৃত্রিমভাবে তৈরি একটি পলিমার। এটি জীবাশ্ম জ্বালানি বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা হয়। নমনীয় ক্ষয়রোধী, দীর্ঘস্থায়ী ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় প্লাস্টিকের তৈরি পণ্য মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে সাগরের তলদেশ থেকে মাউন্ট এভারেস্ট পর্যন্ত পৃথিবীর সর্বত্র, এমনকি মেরু অঞ্চলেও প্লাস্টিক বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই পৃথিবীর মাটি, পানি, বায়ুমণ্ডল, বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও মানব স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই প্লাস্টিক দূষণ।

বর্তমান পৃথিবীর মানুষের দৈনন্দিন জীবন প্লাস্টিক ছাড়া কল্পনাতীত। প্রায় সকল ধরনের মোড়ক ও বোতল প্লাস্টিকের তৈরি। ব্যবহৃত প্লাস্টিকের কিছু অংশ রিসাইকেল করা হলেও বেশিরভাগই বর্জ্য হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৪৫ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ৪০০ বছর পর্যন্ত পরিবেশে বিরাজ করে জীব ও প্রকৃতির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। উন্নত দেশে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকায় ব্যবহৃত প্লাস্টিক পরিবেশে কম ছড়িয়ে পড়ে। তবে চীনসহ এশিয়ার দেশগুলো বিশ্বের ৫১ শতাংশ প্লাস্টিক দূষণকারী। প্লাস্টিক দূষণকারী শীর্ষ দেশের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে।

প্লাস্টিক বর্জ্য (বিসফেনল-এ, ফথেলেটস, বিসফেনোন, অর্গানোটিনস, পার ও পলি ফ্লোরোঅ্যালকাইল এবং ব্রোমিনেটেড ফেইম রিটারডেন্টস ইত্যাদি) মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশে নিঃসরণ করে।

ন্যানো ও মাইক্রো কণা হিসেবে এসব ক্ষতিকর পদার্থ খাদ্যচক্র ও পানির মাধ্যমে প্রাণী দেহে প্রবেশ করছে। মাইক্রো ও ন্যানো প্লাস্টিক কণায় থাকা এসব পদার্থ যেকোনো জীবের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার বিরূপ পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

প্লাস্টিক বর্জ্য মাইক্রো ও ন্যানো কণার ক্ষতিকর পদার্থ মানবদেহে থাকা হরমোনজনিত পরিবেশ পরিবর্তন করে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরি ব্যাহত করতে পারে। স্নায়ুকোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের নানা রোগের কারণ হতে পারে। কোষের জীনগত পরিবর্তন করে ক্যানসারসহ আরও নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া, প্লাস্টিক পণ্যের সরাসরি সংস্পর্শে ত্বকের রোগ হতে পারে।

প্লাস্টিকের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্য ছাড়া আধুনিক জীবন অচল। এ জন্য প্লাস্টিক পণ্য নিষিদ্ধ করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ যৌক্তিক নয়। বহুল ব্যবহৃত প্লাস্টিকে তৈরি পলিথিন ব্যাগ দূষণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। পলিথিনের পরিবর্তে কাগজ, পাট বা প্রাকৃতিক তন্তুর তৈরি ব্যাগ ব্যবহার উৎসাহিত করতে হবে, প্রয়োজনে পলিথিনের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যেতে পারে।

তবে পলিথিন ও অন্যান্য প্লাস্টিক দ্রব্যসহ সকল ধরনের বর্জ্যের জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। যত্রতত্র ময়লা বা বর্জ্য না ফেলার জন্য জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আধুনিক বিশ্বে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে প্লাস্টিক দূষণ। আন্তর্জাতিকভাবে ইতোমধ্যেই গৃহীত উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বয় করে যত দ্রুত সম্ভব দেশে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা উচিত।

ডা. এম আর করিম রেজা, ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

Comments

The Daily Star  | English

Gaza rescuers say Israeli forces kill 60, half near aid centres

Civil defence spokesman Mahmud Bassal told AFP that five people were killed while waiting for aid in the southern Gaza Strip and 26 others near a central area known as the Netzarim corridor, an Israeli-controlled strip of land that bisects the Palestinian territory

Now