ব্যারিস্টার সুমনের আহ্বানে খোয়াই নদীর বর্জ্য পরিষ্কারে ৬৫০ স্বেচ্ছাসেবী

এমপি হয়ে প্রথম প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কাজ শুরু করলেন ব্যারিস্টার সুমন।

নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন খোয়াই নদীর বর্জ্য ও দুর্গন্ধ মুক্তকরণ করবেন। এমপি হওয়ার পর সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন চুনারুঘাট-মাধবপুরের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। 

প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে গত রোববার পুরাতন খোয়াই নদীর বর্জ্য অপসারণ ও দুর্গন্ধ মুক্তকরণ কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। সেদিন তার কয়েকজন অনুসারী ১৫-২০ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে চুনারুঘাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের পাশে খোয়াই নদীর বর্জ্য অপসারণ শুরু করেন। 

তবে এতে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। আজ শুক্রবার ভোর থেকে বিডি ক্লিনের প্রায় সাড়ে ৬০০ স্বেচ্ছাসেবী খোয়াই নদীর বর্জ্য পরিষ্কার করা শুরু করেন।

চুনারুঘাট মরা খোয়াই নদী রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক সহকারী অধ্যাপক মাজহারুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক সময়ের খরস্রোতা খোয়াই নদীতে নৌকা চলত, জেলেরা মাছ ধরতেন। এটি কালের আবর্তে মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। নদীতে মাছ নেই, ময়লা-আবর্জনায় পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি নদীর দুইপাশ দখল করে গড়ে উঠেছে বাসাবাড়ি ও দোকানপাট। একদিকে যেমন অবৈধ দখল, অপরদিকে পৌরসভার ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে এই নদী।'

অবৈধ দখল, বর্জ্য ও দূষণে মরা নদীতে পরিণত হয়েছে খোয়াই। ছবি: স্টার

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল ডেইলি স্টারকে বলেন, '১৯৭৮-৭৯ সালে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে খনন করে উপজেলার খোয়াই নদীকে শহরের বাইরে স্থানান্তর করা হয়। এরপর নদীটির প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশ মরা খোয়াই নদী হিসেবে পরিচিতি পায়। ধীরে ধীরে দখল ও দূষণের কবলে ক্রমেই মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে খোয়াই। নদীতে এখন আর নেই পানিপ্রবাহ। নদীর জায়গা দখল করে প্রতিনিয়ত স্থাপনা গড়ে ওঠায় কমছে প্রশস্ততা।'

স্থানীয় বাসিন্দা সামছুল মিয়া ডেইলি স্টারকে জানান, ক্রমাগত দখল-দূষণের ফলে নদীর চারপাশের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, খোয়াই নদী দখল করে ঘরবাড়ি ও দোকান তৈরি করা হয়েছে। নদী ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স।  

জানতে চাইলে চুনারুঘাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীর বুকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়েছে এটা ঠিক। উপজেলা প্রশাসন নিজেরাই নদীর শ্রেণী পরিবর্তন করে এ স্থাপনা নির্মাণ করেছে।'

এমন বাস্তবতায় নির্বাচনের আগে ভক্ত, অনুসারী ও শুভানুধ্যায়ীর উদ্দেশে মধ্যবাজার মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে এসে পথসভায় দেওয়া বক্তব্যে পুরাতন খোয়াই নদীর বর্জ্য অপসারণ ও দুর্গন্ধ মুক্তকরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। 

এবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েই হাত দিলেন এ কাজে।

জানতে চাইলে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যে ইশতেহার ঘোষণা করেছিলাম, দায় মেটাতে তা বাস্তবায়নে শপথ পাঠের পর এলাকায় প্রথম পুরাতন খোয়াই নদী বর্জ্য ও দুর্গন্ধ মুক্তকরণ শুরু করেছি।'

তিনি বলেন, 'আমার বিশ্বাস, আগে নিজ তাগিদে যেভাবে সফল হয়েছি, এবার জনগণ দায়িত্ব দিয়েছে তাই আরও বেশি করব।'

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিনের প্রধান সমন্বয়কারী জহিরুল ইসলাম রবি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের মূলমন্ত্র "পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের স্বপ্ন"-এই মন্ত্র নিয়েই আমরা এই কাজগুলো করছি। প্রায় ৭০০ স্বেচ্ছাসেবক এখন মরা খোয়াই নদী পরিষ্কার করার জন্য কাজ করছি।'

উল্লেখ্য, দেশ ও সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরে আলোচিত ব্যারিস্টার সুমন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন টানা দুইবারের সংসদ সদস্য সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে হারিয়ে।

Comments