কুয়াকাটা সৈকত ছেয়ে যাচ্ছে জেলিফিশে, মাছ ধরা ব্যাহত

বিস্তীর্ণ সৈকত-জুড়ে পড়ে আছে মৃত জেলিফিশ। এগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ছবি: স্টার

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসছে অসংখ্য মৃত জেলিফিশ। গত ২০-২৫ দিন ধরেই সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে আসা এসব জেলিফিশ ছড়িয়ে পড়ছে সৈকতের বিশাল এলাকাজুড়ে। গত ৮-১০ দিন ধরে এর পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। জেলিফিশের উপদ্রবে জেলেদের সমুদ্রে মাছ ধরা ব্যাহত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং সামুদ্রিক কচ্ছপের সংখ্যা কমে গেলে জেলিফিশের উপদ্রব বাড়ে। কেননা সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রধান খাবার জেলিফিশ।
 
গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে কুয়াকাটা সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ সৈকত-জুড়ে পড়ে আছে মৃত জেলিফিশ। এগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পর্যটকরাও এতে চরম বিরক্ত।

কুয়াকাটা এলাকার জেলে বাচ্চু কাজী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ২০-২৫ দিন ধরে সৈকতে দেখা মিলছে মৃত জেলিফিশের। কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিম দিকে লেম্বুর চর এলাকা থেকে পূর্বে গঙ্গামতি পর্যন্ত মরা জেলিফিশ পড়ে রয়েছে। এগুলোর একেকটির ওজন ১২ থেকে ১৫ কেজি।' 

'আমরা এখন সাগরে মাছ ধরতে পারছি না। জাল ফেললেই মরা জেলিফিশ উঠছে। এগুলো শরীরে লাগলে অসহনীয় চুলকানি হচ্ছে। তাই মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি', বলেন তিনি।

অপর জেলে আরিফ হোসেন বলেন, 'সামনে ঈদ, সাগরে মাছ ধরতে পারছি না। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কীভাবে ঈদ করব, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। প্রতি বছরই এ সময়ে জেলিফিশ দেখা যায়। তবে এবারের পরিমাণ খুব বেশি।'

সমুদ্রগামী মাছ ধরা ট্রলারের মালিক আলীপুর এলাকার মাছ ব্যবসায়ী আব্দুর বারেক মোল্লা বলেন, 'আমার তিনটি মাছ ধরা ট্রলার রয়েছে। জেলিফিশের আধিক্যের কারণে প্রায় এক মাস ধরে জেলেরা সাগরে জাল ফেলতে পারছে না। ট্রলারে কর্মরত জেলেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে আছে।'

সামুদ্রিক মাছের প্রজননসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'ইকোফিশ'র কলাপাড়ার সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলত সাগরের পানির তাপমাত্রা ও গভীর সাগরে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেলে জেলিফিশের পরিমাণও বেড়ে যায়। সামুদ্রিক কচ্ছপের সংখ্যা কমে গেলেও জেলিফিশের আধিক্য ঘটে। কেননা জেলিফিশ সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রধান খাবার।'

কলাপাড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, প্রতি বছর এ সময়টাতে সাগরে জেলিফিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মূলত ছোট ছোট মাছ ও মাছের ডিম খাওয়ার জন্য এসব জেলিফিশ উপকূলের কাছাকাছি আসে। তখন বালিয়াড়িতে আটকে এগুলো মারা যায়। মাসখানেক পর এগুলো কমে গেলে জেলেরা আবার সমুদ্রে স্বাভাবিকভাবে মাছ আহরণ করতে পারবেন।

আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. শাকিল আহমেদ বলেন, 'সাগরে জেলিফিশের আধিক্যের কারণে জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন না। তাই সামুদ্রিক মাছ আহরণের পরিমাণও কমে গেছে। স্থানীয় বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।' 

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। প্রতি বছরই এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। তবে এ বছর বেশি পরিমাণে জেলিফিশ সৈকতে দেখা যাচ্ছে।' 

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, 'রমজান মাসে কুয়াকাটায় এমনিতেই পর্যটকের সংখ্যা কম। তার ওপর সৈকতের বিশাল অংশজুড়ে মরা জেলিফিশের দুর্গন্ধে পর্যটকরা বিরক্তিবোধ করছেন। যদিও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা সৈকতের জিরো  পয়েন্ট এলাকার জেলিফিশগুলো মাটি চাপা দিয়ে দুর্গন্ধ কিছুটা কমানোর চেষ্টা করছেন। তারপরও সৈকত-জুড়ে মরা জেলিফিশের উপদ্রবে গোটা পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে।'
 

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago