নভেম্বরের শেষে নামবে শীত, জেঁকে বসবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে এ বছর তুলনামূলক আগেই সারা দেশে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। বিশেষত উত্তরবঙ্গে রাত থেকে ভোর অব্দি হালকা কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে।
গত সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে বাতাস শীতল হতে শুরু করেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর আশে পাশে তামিলনাড়ু উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি দুর্বল হয়ে একই এলাকায় গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে।
অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও এর আশে পাশের এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত।
আজ রোববার সকালের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাস অনুযায়ী, এর প্রভাবে সারা দেশে আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নভেম্বরেই বঙ্গোপসাগরে আরও একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তারা আরও মনে করছেন, সেই লঘুচাপটিও ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
জানুয়ারি শীতলতম মাস হলেও এবার সময়ের চেয়ে এগিয়ে চলেছে আবহাওয়াচক্র। ফলে নভেম্বরের মধ্যভাগের পরেই নামবে শীত। আর ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে জাঁকিয়ে বসবে। আগামী মাসের মাঝামাঝিতে একটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে আবহওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর আশে পাশে তামিলনাড়ু উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ইতোমধ্যে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। তবে আগামী ৩-৪ দিন পরেই আরেকটি লঘুচাপের সৃষ্টি হবে। সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে ধারণা করা হলেও এখন পর্যন্ত তেমন মনে হচ্ছে না।
লঘুচাপটি আমাদের এদিকে না হয়ে শ্রীলঙ্কা বা তামিলনাড়ুর দিকে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, বলেন তিনি।
অক্টোবরের আবহাওয়া পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত মাসে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে রাজশাহী বিভাগে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগে স্বাভাবিক পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে।
দেশ থেকে ২০ অক্টোবর বর্ষা (মৌসুমি বায়ু) বিদায় নেয়। তবে ওই দিনই সকাল ৬টায় আন্দামান সাগর ও এর পাশে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়। ২১ অক্টোবর সেটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ, ২২ অক্টোবর নিম্নচাপ ও ২৩ অক্টোবর গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। ২৩ অক্টোবর পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর পাশের পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে পরিণত হয়। পরদিন রাত ৯টা থেকে পরবর্তী ৩ ঘণ্টায় ভোলার কাছাকাছি হয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে। মধ্য রাতে সিত্রাং দুর্বল হলে নিম্নচাপ আকারে ঢাকা, কুমিল্লা ও বাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় অবস্থান করে। এটি আরও উত্তরে এগিয়ে প্রথমে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে নেত্রকোণা জেলা ও আশে পাশের এলাকায় অবস্থান করে। পরবর্তীতে আরও উত্তরে এগিয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।
সিত্রাংয়ের প্রভাবে ২৩ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ জায়গায় মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। অনেক জায়গায় অতিভারী বর্ষণ রেকর্ড করা হয়। ২৪ অক্টোবর বরিশালে দৈনিক সর্বোচ্চ ৩২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
১ অক্টোবর সৈয়দপুরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ৩১ অক্টোবর তেঁতুলিয়ায় ১৬ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
Comments