‘অসহনীয় হয়ে উঠেছে ঠান্ডার কষ্ট’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার উত্তর সাপ্টানা গ্রাম থেকে আজ শনিবার সকালে তোলা ছবি। ছবি: এস দিলীপ রায়

শীতে কাঁপছে উত্তরের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের মানুষ। ঘরে ও বাইরে সবখানে শুধু ঠান্ডা। কোথাও স্থির থাকতে পারছেন না মানুষজন। শীতে বয়স্ক ও শিশুদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্বজনেরা। হাসপাতালে বাড়ছে রোগী। অন্যদিকে আয় কমে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের।

কুড়িগ্রামে কৃষি আবহাওয়া পযর্বেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার শনিবার সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আজ সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ৮ জানুয়ারি থেকে এ অঞ্চলে ঠান্ডার প্রকোপ বেড়েছে। দিনের বেলা সূর্যের আলো না থাকায় ঠান্ডার প্রকোপ বেশি অনুভূত হচ্ছে। মাঝে মাঝে সূর্য দেখা গেলেও বেশিক্ষণ মিলছে আলো।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার উত্তর সাপ্টানা গ্রামের গোপিনাথ পাল (৭০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শরীরে চারটা কাপড়, একটা কম্বল ও মাথায় টুপি জড়িয়ে রাখার পরও ঠান্ডা থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। অনবরত ঠান্ডার কারণে তাদের জীবনযাপন অস্থির হয়ে উঠেছে। ঠান্ডার কারণে বিছানাতে শুয়ে থাকাও দুস্কর। বয়স্ক ও শিশুরা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।'

'ঠান্ডার কারণে গেল কয়েকদিন ধরে আমি ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছি না। দিনে ও রাতে কোথাও স্থির থাকতে পারছি না। ঠান্ডা খুবই অসহনীয় হয়ে উঠেছে,' তিনি বলেন।

একই গ্রামের সুদান চন্দ্র রায় (৪০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তিনি দুই শিশু সন্তান ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ভয়ে আছেন। শীতের কাপড় থাকার পরও ঠান্ডা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। ঠান্ডা থেকে বাঁচতে আগুন জ্বেলে তাপ নিচ্ছেন। 'ঠান্ডার কারনে আমার বৃদ্ধা মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ঠান্ডার কারণে আমি কাজকর্মও ঠিকঠাক করতে পারছি না।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার ধরলা নদীপাড়ের শিবেরকুটি গ্রামের পিনজিরা বেগমের (৬৩) সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, তার স্বামী খুব অসুস্থ। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর ছোট একটি ঘরে বাস করেন তারা। ঠান্ডার কারনে তিনি বাইরে যেতে পারছেন না। তাদেরকে অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে। 'জারোত হামরাগুলা কোকরা হয়া থাকি। হামাক কাইও এ্যাকনা কম্বলও দেয় নাই। বিয়নকা আর আইতোত খুব জার নাগে। জারের কারনে আইতোত নিদও ধরে না। জারোত হামারগুলার খুব কষ্ট হইছে,' তিনি বলেন।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সোনাইকাজী গ্রামের দিনমজুর দিলবর হোসেন (৫৫) বলেন, কোনোভাবেই ঠান্ডা কমছে না। একদিন ঠান্ডা একটু কম মনে হলে তারপর দিন ঠান্ডা আবার বেশি। চারদিকে কুয়াশা আর কুয়াশা। মাঝে মাঝে হিমেল বাতাস থাকায় ঠান্ডা আরও বেশি কষ্টের হয়ে উঠেছে। ঠান্ডার কারণে কাজ করতেও পারি না।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, গেল দুই সপ্তাহে শীতজনিত নানা রোগে কুড়িগ্রামে ৩২০০ শিশু ও বয়স্ক আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ৩৮৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। লালমনিরহাটে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৮০০ রোগী। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২২০ জন।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শিশু ও বয়স্ক মানুষ শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শিশুরা বেশি শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসময় শিশু ও বয়স্ক মানুষকে পর্যাপ্ত শীতের কাপড় গায়ে দিতে হবে। এসময় কুসুম গরম পানি পান করাতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

123 ‘pushed in’ from India

Border Guard Bangladesh (BGB) yesterday detained at least 123 individuals, including Rohingyas and Bangla-speaking individuals, after India pushed them into Bangladesh through Kurigram and Khagrachhari border points.

28m ago