শীতের তীব্রতা বেড়েছে, কুয়াশা থাকতে পারে আরও ২-৩ দিন

তীব্র শীত, শীত, কুয়াশা, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, চুয়াডাঙ্গা, তেঁতুলিয়া,
ঘন কুয়াশা ও হিম বাতাসে উত্তরাঞ্চলের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ছবি: কংকন কর্মকার

তীব্র শীতে কাঁপছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ছিল কুয়াশার দাপট, দেখা মেলেনি সূর্যের। শীতের তীব্রতা বাড়ায় ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ মানুষের। আবহাওয়া অফিস বলছে, ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে আরও দুই থেকে তিন দিন কুয়াশা থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ছিল।

আবহাওয়ার সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে এবং দিনের তাপমাত্রা এক থেকে দুই থেকে ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।

দ্য ডেইলি স্টারের ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা জানান, সূর্যের দেখা না মেলায় ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে হাড় কাঁপানো শীতে দৈনন্দিন কাজ চালাকে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দেশের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বুধবার বিকেল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস।

হাড় কাঁপানো শীতে খেতমজুর, রিকশাচালক ও দিনমজুররা তাদের দুর্দশার কথা জানান। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ইয়াকুবপুর গ্রামের মিনা বেগম (৩৫) কাজ করছিলেন একটি আলু খেতে। তিনি বলেন, 'রোদ না থাকায় ও হিমালয়ের দিক থেকে আসা হিম বাতাসের কারণে মাঠে থাকা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।'

একই উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের রিকশাচালক নজরুল ইসলাম (৫০) বলেন, হিমেল হাওয়া ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে হাত ও পা জমে যাচ্ছে।

এদিকে আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় নয় দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আমাদের বেনাপোল সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। উত্তর দিক থেকে আসা হিম বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে।

আজ সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক জাহিদুল ইসলাম জানান, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকালের চেয়ে তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৫ শতাংশ।

এর আগে গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল নয় দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৩ শতাংশ।

স্থানীয় বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, কনকনে বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষ। প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। মানুষ খড় ও লাঠি দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক জাহিদুল ইসলাম আরও জানান, চুয়াডাঙ্গায় হিম বাতাস বইছে। কুয়াশা পড়ছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো। একদিনে জেলায় ২ ডিগ্রি কমেছে তাপমাত্রা।

ডেইলি স্টারের দিনাজপুর সংবাদদাতা জানিয়েছেন, তীব্র শীতসহ ঘন কুয়াশা ও হিম বাতাস উত্তরাঞ্চলের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে দিনাজপুরে তাপমাত্রা ১০ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। দিনাজপুর শহরে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় দিনমজুরদের কাজের সুযোগ কমে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বলেন, 'শীতে কেউ শ্রমিক নিতে চাচ্ছেন না। কোনো কোনো দিন কাজ পাই; আবার কোনো দিন শীতে অলস বসে থাকি।'

একই দুর্দশার কথা বলেছেন অটোরিকশা চালক কালু মোহন্তও। তিনি বলেন, 'গত তিন দিন ধরে সূর্য দেখা না যাওয়ায় রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। যাত্রী কম থাকায় আমার রোজগার অনেক কমে গেছে।'

ঘন কুয়াশা ও প্রচণ্ড শীতে যানবাহন চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। রাস্তায় হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। দৃশ্যমানতা কম থাকায় দূরপাল্লার বাসগুলো দেরিতে চলছে।

দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন আশঙ্কা করছেন, এ ধরনের শৈত্যপ্রবাহ আরও কয়েকদিন থাকতে পারে।

তিনি সবার কাছে প্রয়োজনীয় সতর্কতা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English
education in Bangladesh

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

13h ago