যেদিকে এগোচ্ছে গভীর স্থল নিম্নচাপ, শুক্রবারও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি উপকূল অতিক্রম করে গভীর স্থল নিম্নচাপ আকারে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে এগোচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার চার নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে গভীর স্থল নিম্নচাপ বৃষ্টি ঝরিয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়বে।
যেদিকে এগোচ্ছে গভীর স্থল নিম্নচাপটি
আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বশেষ ছয় ঘণ্টায় গভীর স্থল নিম্নচাপটির গতি ছিল ঘণ্টায় ২০-২২ কিলোমিটার। যদি এই গতিতেই এগোতে থাকে, তাহলে শুক্রবার সকাল নাগাদ ঢাকা পার হয়ে টাঙ্গাইল এবং দুপুরে শেরপুর ও এর আশে পাশের এলাকায় অবস্থান করতে পারে।'
'আমরা মনে করছি, এরপর এটি দুর্বল মৌসুমি বায়ুর অক্ষের সঙ্গে মিলে যাবে। তবে এর প্রভাবে আগামীকালও সারা দেশে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। পরশু থেকে রংপুর বিভাগে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে,' বলেন তিনি।
এদিন সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার মধ্য দিয়ে গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে।
তুলনামূলক দ্রুত এগিয়েছে নিম্নচাপটি
আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অতীতে আমরা দেখেছি সাগর থেকে উপকূলে ওঠার পর গভীর স্থল নিম্নচাপ অনেক সময় নিয়ে এগোয়। এবার তুলনামূলক কম সময় নিয়েছে। এর কারণ মৌসুমি বায়ুর প্রভাব। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও রংপুর বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। অন্যদিকে ওয়েস্টার্ন ডিস্টারবেন্স দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এই দুই কারণে সময় কম লেগেছে।'
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নতুন করে আর কোনো বিশেষ বিজ্ঞপ্তি তারা প্রকাশ করবে না।
সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে এক-তিন ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ইতোমধ্যে উপকূলীয় বেশ কটি জেলার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে।
যে কারণে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলো না
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেন, 'চলতি বছর স্বাভাবিক সময়ের এক সপ্তাহ আগেই, গত ২৪ মে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। প্রায় ১৬ বছর পর এবার এত আগে দেশে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটেছে এবং মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করে সক্রিয় হয়েছে। যে কারণে আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছিলাম, মে মাস ঘূর্ণিঝড়প্রবণ মাস হলেও এটি মৌসুমি নিম্নচাপ আকরে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।'
'সাগরে প্রথম লঘুচাপ, তারপর সুষ্পষ্ট লঘুচাপ, পরে নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপ এবং শেষে তা ঘূর্ণিঝড় হয়। যখন মৌসুমি বায়ুর সক্রিয় থাকে, তখন গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড় হয়ে ওঠার মতো শক্তি সঞ্চয় করতে পারে না। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য প্রবল গরম হাওয়ার সঞ্চয় প্রয়োজন হয়,' বলেন তিনি।
তিনি বলেন, 'যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক আলোচনা ছিল সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে "শক্তি"। ঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে নানা আলোচনা ছিল। তবে আমরা বারবারই নিশ্চিত করেছি, ঘূর্ণিঝড় আসছে না।'
তিনি বলেন, 'গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের সৃষ্টি হয়, বুধবার সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয় এবং আজ বৃহস্পতিবার ভোরে এটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। পরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত না হওয়ার আরেকটি কারণ হলো—ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার জন্য উপকূল থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকতে হয়। এই লঘুচাপটি যখন সৃষ্টি হয়, তখন উপকূল থেকে ততটা দূরে ছিল না। উপকূলের এত কাছে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার জন্য শক্তি সঞ্চয়ের সময় পায়নি।'
এই আবহাওয়াবিদ মনে করেন, আগামীকাল বিকেল নাগাদ দেশের অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে যাবে।
Comments