বন্দরনগরীতে চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব

গত দুই সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম শহরে হঠাৎ করেই কনজাংটিভাইটিস (চোখের প্রদাহ) রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। চোখ ওঠা নামে পরিচিত এই রোগে শিশুদের বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে।
প্রতীকী ছবি

গত দুই সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম শহরে হঠাৎ করেই কনজাংটিভাইটিস (চোখের প্রদাহ) রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। চোখ ওঠা নামে পরিচিত এই রোগে শিশুদের বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে।

এতে উদ্বিগ্ন অনেক অভিভাবক সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। 

শুধু শিশু নয়, সব বয়সের মানুষকেই এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। সংক্রমিতরা বেশিরভাগই বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে অনেকেই অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় শতাধিক চোখ ওঠা রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রায় এক মাস আগে এই সংখ্যা ছিল দৈনিক ২-৩ জন।

চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরে হঠাৎ করেই কনজাংটিভাইটিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ ভাইরাস সংক্রমণ। 

তারা বলছেন, কনজাংটিভাইটিস বা চোখ-ওঠা একটি মেডিকেল অবস্থা যেখানে চোখের স্বচ্ছ ঝিল্লিতে (কনজাংটিভা) প্রদাহ বা সংক্রমণ ঘটে। এটি সাধারণত ভাইরাল সংক্রমণের কারণে ঘটে, যা অত্যন্ত সংক্রামক।

তবে সুখবর হলো, এক সপ্তাহের মধ্যে বেশিরভাগ রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

নগরীর ষোলশহর এলাকার বাসিন্দা মো. ইসমাইল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত সপ্তাহে তার মেয়ে চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হয় এবং ২-৩ দিন পর তিনি নিজেও এ রোগে আক্রান্ত হন।

ইসমাইল জানান, বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ৫ দিনের মধ্যে দুজনই সুস্থ হয়েছেন।

একই অবস্থা নগরীর আল করণ এলাকার বাসিন্দা কলেজশিক্ষক পলাশ মজুমদারের ও তার মেয়ের। প্রথমে পলাশ আক্রান্ত হন এবং পরে তার মেয়েও আক্রান্ত হন। তবে কোনো জটিলতা ছাড়াই এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন দুজনেই।

অনেকের ধারণা, চোখওঠা রোগীর চোখের দিকে সরাসরি তাকালে তারাও এই রোগে আক্রান্ত হবেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি ভুল ধারণা।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এস এম তারেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যদিও চোখ-ওঠা রোগটি অত্যন্ত সংক্রামক। তবে কারও চোখের দিকে তাকালেই সংক্রমিত হয় না। যদি কোনো সংক্রমিত রোগী চোখ স্পর্শ করের এবং  সেই হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধৌত না করেই যদি কোনো কিছুতে স্পর্শ করে, তবে ভাইরাস ওই বস্তুতে চলে যায়। এখন যদি অন্য কেউ ওই বস্তু স্পর্শ করে এবং হাত না ধুয়ে চোখ স্পর্শ করে, তাহলে তার চোখও সংক্রমিত হবে।'

'শুধু সংক্রমিত চোখের সঙ্গে কোনওভাবে সরাসরি যোগাযোগই রোগটির সংক্রমণ ঘটাতে পারে,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'অন্যথায়, সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বললে বা একসঙ্গে কাজ করলে তার থেকে সংক্রমিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।'

ডা. তারেক বলেন, 'কখনো কখনো চোখ-ওঠা রোগীদের সেকেন্ডারি ইনফেকশন থেকে রক্ষা করতে তাদের চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপের প্রয়োজন হয়। তবে বেশিরভাগ রোগী বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে যায়।'

শেভরন চক্ষু হাসপাতাল চট্টগ্রামের চক্ষু বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. দেলোয়ার হোসেন একই অভিমত ব্যক্ত করে জানান, বর্তমানে তার হাসপাতাল ও চেম্বারে চোখ-ওঠা রোগীর প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, 'রোগীদের ভিড় এত বেশি যে আমার ধারণা এই সময়ের মধ্যে শহরের বেশিরভাগ বাড়িতে অন্তত একজন সদস্য সংক্রমিত হতে পারেন।'

তিনি বলেন, 'প্রতি বছর গ্রীষ্মে এই ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগটি দেখা যায়। তবে এবার শরৎকালে এর প্রকোপ বেড়েছে।'

এ রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে ডা. দেলোয়ার বলেন, 'সংক্রমিত ব্যক্তি চোখ স্পর্শের পর হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিলে এবং সংক্রমিত না হলেও চোখ স্পর্শের আগে হাত ভালোভাবে ধুলে এ রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।'

এ বিষয়ে সবাইকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন তিনি।

 করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শেষ…

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago