খেজুরের কাঁচা রস ছাড়াও যেভাবে আক্রান্ত হতে পারেন নিপাহ ভাইরাসে

প্রতীকী ছবি

দেশের ২৮ জেলায় ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে নিপাহ ভাইরাস। সরকারি তথ্য মতে, বাংলাদেশে চলতি শীতের মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৯ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

নিপাহ ভাইরাসের প্রধান বাহক বাদুড়। এই ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো অবস্থাতেই খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া যাবে না। তবে খেজুরের রস সিদ্ধ করে বা গুড় বানিয়ে খাওয়া যাবে। খেজুরের রস ছাড়াও বিভিন্ন ফলের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, নিপাহ ভাইরাসের কোনো ওষুধ নেই, টিকাও নেই। কেবলমাত্র উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৭০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ। বাংলাদেশে এই হার ৭১ শতাংশ।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু খেজুরের কাঁচা রস খাওয়াই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তের একমাত্র কারণ নয়। বাদুড়ের লালা বা মল লেগে থাকা যেকোনো ফল খেলেই এই রোগ হতে পারে। এমনকি আক্রান্ত রোগী থেকেও অন্যদের মধ্যে এই রোগ ছড়ায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিপাহ ভাইরাসের প্রধান বাহক বাদুড়। এই ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো অবস্থাতেই খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া যাবে না। তবে খেজুরের রস সিদ্ধ করে বা গুড় বানিয়ে খাওয়া যাবে। খেজুরের রস ছাড়াও বিভিন্ন ফলের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। আমরা যেসব ফল বা সবজি না ছিলে খাই, যেমন: টমেটো, বরই, পেয়ারা, স্ট্রবেরী— সেগুলো অবশ্যই সাবান দিয়ে ধুয়ে খেতে হবে। আর যেসব ফল ছিলে খাই, সেগুলো পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে। বাদুড় খেয়েছে এমন কোনো ফল খাওয়া যাবে না।'

তিনি বলেন, 'যারা খেজুরের রস সংগ্রহ ও পরিবহণের সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। যেসব হাঁড়িতে এই রস সংগ্রহ করা হয়, তা ভালোভাবে সচেতনতার সঙ্গে পরিষ্কার করতে হবে। যারা চিকিৎসা দেবেন তাদেরকেও সচেতন থাকতে হবে। মাস্ক ও গ্লাভস পরিধান করতে হবে। কারণ এই রোগ একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়ায়।'

'নিপাহ ভাইরাস ১৯৯০ এর দশকে মালয়েশিয়া প্রথম শনাক্ত হয়। সেখান থেকে শূকরের মাংসের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে ছড়িয়ে পরে রোগটি। তবে সেসব দেশে এখন আর রোগী দেখা যায় না। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে নিপাহ ভাইরাসের এমন বিস্তার নেই। কেন বাংলাদেশ থেকে এই ভাইরাস দূর করা সম্ভব হচ্ছে না সেটি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে এবং মানুষকে সচেতন করতে হবে,' তিনি যোগ করেন।

নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ৫-৭ দিন পর এর লক্ষণগুলো দেখা যায়। এর লক্ষণ হলো, জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, বমি, গলা ব্যথা, মাথা ঘোরা, তৃষ্ণা, বেহুশ হয়ে যাওয়া, অসংলগ্ন প্রলাপ। এসব লক্ষণ দেখা দিলেই রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে যায়।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, 'কারো ঘরে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী থাকলে অন্যদের অনেক বেশি সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। মাস্ক ও গ্লাভস পরতে হবে। রোগীর কফ, থুথু পুড়িয়ে ফেলতে হবে অথবা মাটির নিচে পুতে ফেলতে হবে। যেসব ডাক্তার, নার্স এই রোগীদের চিকিৎসা দেবেন তাদেরকেও অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে। কারণ একজন থেকে আরেক জনের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়ায়।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের (সিডিসি) পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর মো. নাজমুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোনো ব্যক্তি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ৫-৭ দিন পর এর লক্ষণগুলো দেখা যায়। এর লক্ষণ হলো, জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, বমি, গলা ব্যথা, মাথা ঘোরা, তৃষ্ণা, বেহুশ হয়ে যাওয়া, অসংলগ্ন প্রলাপ। এসব লক্ষণ দেখা দিলেই রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে যায়। তাই সবার মধ্যে অবশ্যই সচেতনতা তৈরি করতে হবে। কোনোভাবেই খেজুরের কাঁচা রস বা বাদুড় খাওয়া ফল খাওয়া যাবে না।'

বর্তমানে শুধু বাংলাদেশেই নিপাহ ভাইরাসের প্রকোপ বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব আছে। মানুষ সচেতন হলেই নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধ সম্ভব। আমরা সবই এ সম্পর্কে জানি, কিন্তু মানি না। এ কারণে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাস নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না।'

'নিপাহ ভাইরাস বিষয়ে আমরা উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি। তাছাড়া রোগীর অবস্থা যদি খুব খারাপ হয়ে তাদেরকে প্রয়োজনে ঢাকায় পাঠতে বলা হয়েছে,' বলেন নাজমুল ইসলাম।

আইসিডিডিআর,বির তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হলেও পরবর্তীতে গুরুতর স্নায়বিক জটিলতায় পড়ার আশঙ্কা থাকে। গর্ভবতী নারীদের গর্ভাবস্থার শেষ দিকে এই জটিলতা আরও খারাপ হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Dev budget expenditure: Health ministry puts up poor show again

This marks yet another year of weak budget execution since the health ministry was split into two divisions in 2017.

9h ago