রংপুরে সাধারণ রোগীদের সঙ্গেই চলছে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড চালু না করেই সাধারণ রোগীদের সঙ্গেই রাখা হয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের। এখান থেকে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন অন্য রোগীরা। আর কর্তৃপক্ষ বলছে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী। স্টার ফাইল ফটো

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড চালু না করেই সাধারণ রোগীদের সঙ্গেই রাখা হয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের। এখান থেকে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন অন্য রোগীরা। আর কর্তৃপক্ষ বলছে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রংপুরে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বর্তমানে সেখানে ১২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলার মেডিসিন ওয়ার্ডের ৩ নম্বর এবং ৬ নম্বর ইউনিটে তাদের রাখা হয়েছে।

সোমবার সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, সাধারণ রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, এক সঙ্গে রাখায় অন্য রোগীদেরও মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। দ্রুত ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড চালুর দাবি জানান তারা।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রিহানা (২৭) বলেন, 'সাধারণ রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্তদের রাখাটা নিরাপদ মনে হয় না। এখানে টয়লেটগুলোতে মশার উপদ্রব। জানালা দিয়েও মশা আসে। পরিস্থিতি এমন যে, এখান থেকেই ডেঙ্গু ছড়াতে পারে।'

সুরুজ্জামান নামে আরেক ডেঙ্গু রোগী বলেন, 'ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসার কয়েক দিন পর জ্বর শুরু হয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে একটু ভালো আছি, তবে চিকিৎসা সেবা আরও উন্নত হওয়া দরকার ছিল।'

খন্দকার রিয়াজুল ইসলাম নামে এক রোগীর স্বজন জানান, মশারি দিয়ে রোগীদের রাখা হয়েছে। ডেঙ্গু যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেটা নিয়ে তৎপরতা নেই বললেই চলে।

আরেক রোগীর স্বজন মানিক মিয়া বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরে ব্যথা হয়। তারা ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। এতে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য আলাদা ওয়ার্ড চালু করা দরকার।

রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী জানান, এখন পর্যন্ত যারা ভর্তি রয়েছে, তাদের যথাসাধ্য চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিছু দিন আগে একজন মারা গেছেন। আমরা আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড করার চেষ্টা করছি। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সাধারণ রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আমাদের ইউনিট এবং বেডের সমস্যা রয়েছে।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডেঙ্গু শুধু রংপুর অঞ্চলে না সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। তবে হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের কাছ থেকে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডেঙ্গু রোগীদের বিশেষ নজরে রাখারও আশ্বাস দেন তিনি।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ৪ জুলাই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান বুলেট লাল। পুরাতন সদর হাসপাতাল কলোনির বাসিন্দা বুলেট ঢাকায় একটি সরকারি অফিসে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেই জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। পরে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু নিশ্চিত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বুলেট।

এদিকে, রংপুর সিটি করপোরেশনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নগরীতে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করার অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে তারা কেরানিপাড়া এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে এবং কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত করেছেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, প্রাথমিকভাবে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তী অভিযানে লার্ভা শনাক্ত হলে জরিমানাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Ban on plastic bags a boon for eco-friendly sacks

Availability of raw materials now a challenge

1h ago