সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামে বেড়েছে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও শনাক্তের হার

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ। গত মাসের তুলনায় চলতি মাসের এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বেড়েছে প্রায় আট গুণ। একই সময়ে শনাক্তের হার বেড়েছে চার গুণের বেশি।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় এডিস মশার হট স্পট খুঁজে বের করতে জরিপ শুরু করেছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি মাসে এ পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ৬৭০ জন ডেঙ্গু শনাক্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। আগস্ট মাসে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২০২ জন এবং জুলাইয়ে ১৯৮ জন।

চলতি বছরের জানুয়ারি ৬৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ভর্তি রোগী সংখ্যা ছিল অনেক কম। ফেব্রুয়ারিতে ভর্তি ছিলেন ২৫ জন, মার্চে ২৮, এপ্রিলে ১৮, মে মাসে ১৭ ও জুনে ভর্তি ছিলেন ৪১ জন।

চলতি বছরের এ পর্যন্ত ১৩ জনের ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি মাসে আজ বুধবার পর্যন্ত আটজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে গত মাসে একজন, জুলাই মাসে একজন, মার্চে একজন ও জানুয়ারিতে দুইজন রোগীর ডেঙ্গু শনাক্তের পরে মৃত্যু হয়। ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল, মে ও জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কোনো রোগীর মৃত্যুর তথ্য নেই কর্তৃপক্ষের কাছে।

ডেঙ্গু শনাক্ত রোগীর মৃত্যুর ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুর রব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর আমরা চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীদের ওপর একটি গবেষণা চালিয়ে দেখেছিলাম, হাসপাতালে ভর্তি ৭৫ শতাংশ রোগী ডেঙ্গু ২ সেরোটাইপ দ্বারা সংক্রামিত ছিল। ডেঙ্গু ভাইরাসের এই সেরোটাইপ বাকি তিনটি সেরোটাইপের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক।'

'আমরা এই বছর ডেঙ্গু রোগীদের ওপর কোনো গবেষণা এখনো চালাইনি কিন্তু মৃত্যুর হার দেখে আমি অনুমান করেছি, এই বছরেও ডেঙ্গু ২ সেরোটাইপের প্রাদুর্ভাব ঘটছে,' যোগ করে তিনি।

আব্দুর রব আরও বলেন, 'মৃত্যুর হার বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হলো, দেরিতে হাসপাতালে আসা।'

প্রসঙ্গত, ডেঙ্গু ভাইরাস ৪ ধরনের হয় (ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪), যাদের বৈজ্ঞানিক ভাষায় সেরোটাইপ বলা হয়।

বমি, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, নিম্ন রক্তচাপ এবং শরীরের যে কোনো অংশে রক্তপাত দেখা দিলেই রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

সেপ্টেম্বরে এসে রোগী শনাক্ত এবং মৃত্যুর উল্লম্ফনে ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার ঘনত্বের ওপর জরিপ পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়।

সূত্র জানিয়েছে, গত শনিবার থেকে একটি দল এডিস মশার ঘনত্ব নিয়ে জরিপ শুরু করেছে।

চট্টগ্রাম জেলা কীটতত্ত্ববিদ মোছাম্মৎ এনতেজার ফেরদাওছের নেতৃত্বে দলটি ইতোমধ্যে বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক, বহদ্দারহাট, বাকলিয়া, চকবাজার, শেরশাহ, পাহাড়তলী, ফিরিঙ্গিবাজার, কোতোয়ালী এলাকা পরিদর্শন এবং এডিসের লার্ভা সংগ্রহ করেছে।

যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত জরিপটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে পরিচালিত হয়। যেহেতু এই বছর প্রাক-বর্ষা ও বর্ষা মৌসুমে এডিস মশার ওপর কোনো জরিপ হয়নি, তাই আমরা বর্ষা-পরবর্তী সময়ে স্থানীয়ভাবে জরিপ চালাচ্ছি।'

তিনি বলেন, 'আমরা এই মাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সব ওয়ার্ডে জরিপ পরিচালনা করব। এরপর বিভিন্ন এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব জানতে শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হবে। এডিস মশার হট স্পট শনাক্ত হলে মশক নিধন অভিযান পরিচালনায় সহায়ক হবে।'

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'চট্টগ্রামে নিয়মিত বৃষ্টি হওয়ায় এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে এবং বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।'

নগরবাসীকে সুরক্ষিত রাখতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, 'পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় মশা নিরোধক ও লার্ভিসাইড স্প্রে করছেন। এই কাজ পরিচালনায় সিটির ৪১টি ওয়ার্ডকে ১০টি জোনে ভাগ করা হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

US opens door to tariffs on pharma, semiconductors

The trade war is raising fears of an economic downturn as the dollar tumbles and investors dump US government bonds, normally considered a safe haven investment.

2h ago