কাঁচা মরিচের কেজি ২৬০ টাকা, স্বস্তি নেই সবজিতেও

ছবি: স্টার

'মাসখানেক আগে কাঁচা মরিচ কিনতাম ৬০-৮০ টাকা। আজকে ২৬০ টাকা। অন্যান্য সবজির দামও বেড়েছে।'

কথাগুলো বলছিলেন নাসিমা সুলতানা (ছদ্মনাম)। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ায়। থাকেন রাজধানী ঢাকার ফার্মগেট এলাকায়। পেশায় একজন স্কুল শিক্ষিকা তিনি।

আজ রোববার সকালে কারওয়ান বাজার থেকে কাঁচা মরিচ কেনার সময় দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা হয় তার।

তিনি বলেন, 'জিরার দাম কেজিতে কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। মানুষ খাবেটা আসলে কী। এসব দেখারও কেউ নেই। কাউকে কিছু বলাও যায় না।'

আজ কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১০০ টাকা, শসা ৫০-৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। কাঁচা মরিচ ২৬০ টাকায় এবং প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।

নাসিমা সুলতানা বলেন, 'জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। দুনিয়াটা এখন ছোটো হয়ে আসছে। আগে গ্রামে শ্বশুর-শাশুড়ি, বাবা-মাকে নিয়মিত টাকা দিতে পারতাম। আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতা করতে পারতাম। এখন পারি না। তারা ভাবেন, আমরা এখন স্বার্থপর হয়ে গেছি। কিন্তু, পরিস্থিতি যে আমাদের বাধ্য করেছে, সেটা কীভাবে বুঝাই। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কারো পাশে দাঁড়াতে পারি না।'

এই স্কুল শিক্ষিকা বলেন, 'এখন নিজের ছেলে-মেয়েদের নিয়েই চলতে হিমশিম খাচ্ছি। আগে চিকন চাল খেতাম, এখন মোটা চাল খাচ্ছি। অনেক জিনিসের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কিনছি না। আর বাধ্য হয়ে কিনতে হলেও কম কিনছি।'

'আগে ২ নামে কোরবানি দিতাম, এবার ১ নামে দেবো। বাজারে সবকিছুর দাম অনেক বেশি। পেরে ওঠা যাচ্ছে না। কোনটা রেখে কোনটা কিনি। অনেক কিছুই খাওয়া কমাতে হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

নাসিমা সুলতানার পাশে দাঁড়ানো পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নারী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে সাধারণত ঈদের সময় জিনিসপত্রের দাম কমে। কিন্তু, আমাদের দেশে ঈদের সময় শুধু দাম বাড়ে।'

কাঁচা মরিচের মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চাওয়া হয় মরিচ বিক্রেতা মো. রনির কাছে। তিনি বলেন, 'বৃষ্টির কারণে মরিচের সরবরাহ কমে গেছে। এ জন্য দাম বেড়েছে।'

কারওয়ান বাজারে আজ প্রতি ডজন মুরগির ডিম (লাল) বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, হাঁসের ডিম ১৮০ টাকায়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়, লেয়ার মুরগি ২৩০ টাকায়, গরুর মাংস ৭৫০ টাকায়, ছাগলের মাংস ১ হাজার টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।

আকারভেদে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা কেজি। পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, রুই ৩৫০-৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।

বেসরকারি চাকরিজীবী বাচ্চু শেখ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের সব কিছু সমন্বয় করা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। তাছাড়া তো উপায় নেই। কম কিনছি, কম খাচ্ছি—এই নীতিতে চলতে হচ্ছে এখন। চলতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ, যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, সে হারে তো আর বেতন বাড়ে না।'

বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায় এবং প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি ১২৫-১৩০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের মেসার্স আমিন জেনারেল স্টোরের সত্ত্বাধিকারী মো. মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চিনির দাম কমার সম্ভাবনা দেখছি না। সরকার যদি চিনি আমদানিতে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেয় তাহলে ঈদের পর কমতে পারে।'

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলত ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে সরকার নিত্যপণ্যগুলোতে ভর্তুকি দিয়ে বাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Next nat’l polls: BNP urges CA, CEC to disclose what they discussed

The BNP will feel reassured if both the chief adviser and the chief election commissioner disclose to the nation what they discussed about the upcoming national polls during Thursday’s meeting, the party’s Standing Committee member Salahuddin Ahmed said yesterday.

53m ago