মানুষের আয় বাড়ার জন্যও ডিমের চাহিদা বাড়তে পারে: বাণিজ্য সচিব

মানুষের আয় বাড়ার জন্যও ডিমের চাহিদা বাড়তে পারে: বাণিজ্য সচিব
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

মানুষের আয় বাড়ার জন্যও ডিমের চাহিদা বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

আজ সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ডিমের চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাব্য কারণ হিসেবে তিনটি বিষয়কে চিহ্নিত করেন তিনি।

ডিমের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'চাহিদা তো প্রতিনিয়ত বাড়ে। একটা হচ্ছে মানুষের ইনকাম বেড়ে যাচ্ছে। সাত শতাংশ যদি মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়, তার মানে কী—বাড়ছে।

'আরেকটা জনসংখ্যাও কিন্তু বৃদ্ধি হচ্ছে। দুটির প্রভাব পড়ছে। আরেকটা কারণেও বাড়তে পারে, বিকল্প পণ্যে যদি চাহিদা কমে যায়, কমিয়ে দিতে বাধ্য হন তখন চাহিদা বাড়তে পারে। চাহিদা বাড়লে জোগান দেওয়াটা দায়িত্ব। একটা হচ্ছে উৎপাদন, আরেকটা আমদানি। উৎপাদনে সক্ষম না হলে আমদানির প্রশ্ন আসে।'

বাণিজ্য সচিব বলেন, 'গত মাসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। সাড়ে ১০ টাকা উৎপাদন খরচ এবং ১২ টাকা খুচরা পর্যায়ে বিক্রি। দেখা যাচ্ছে, খুচরা পর্যায়ে অনেক জায়গায় এই দামে বিক্রি হচ্ছে না। সেই জন্য উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে আমরা কিছু ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি। চারটি কোম্পানিকে চার কোটি; প্রত্যেককে এক কোটি করে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'যে কোনো উৎস থেকেই আনতে পারে, যেখানে দাম কম পাবে বা দ্রুত আনতে পারবে। আমদানির ক্ষেত্রে কোনো শর্ত নেই। বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করতে হবে।'

বাজার নিয়ন্ত্রণ করা গেলই না, আমাদের ডলার সংকট রয়েছে, তার মধ্যে আমদানির সিদ্ধান্ত। এটাকে আপনারা কীভাবে দেখেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ কি বেশি জরুরি ছিল না—গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'নিয়ন্ত্রণ মানেই তো স্থিতিশীল বা আগের যে দাম ছিল খুব বেশি বৃদ্ধি না পাওয়া। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে যে টুলসগুলো আসে, সেখানে উৎপাদন কত হচ্ছে, আমদানি কত হচ্ছে এবং এই দুটি মিলিয়ে বাজারে যে চাহিদা আছে সেটা মেটাতে পারছি কি না।'

'যখন কোনো পণ্যের আমদানি বন্ধ থাকে, তখন এটা একটা সমস্যা হয়ে যায়। অবশ্যই আমরা যুব সমাজের কর্মসংস্থানের বিষয়গুলো দেখব। দেশের মানুষের আর্থিক উন্নতির জন্য এই শিল্প গড়ে উঠুক সেটা সবাই চায়। এই সুযোগ যখন বাজারে কেউ বেশি মূল্য নিতে চায়, ভোক্তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যায় তখন আমাদের আমদানির কথা ভাবতে হবে,' বলেন তিনি।

সরকারের পক্ষ থেকে ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। পাশের দেশগুলোতে অর্ধেক দামে বিক্রি করে। যারা আমদানি করবেন তারা সর্বোচ্চ দামে বিক্রি করবেন নাকি ভোক্তারা আরও সাশ্রয়ী মূল্যে কেনার সুযোগ পাবে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব বলেন, 'আসলে দাম তো অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। অনেক বেশি আমদানি করতে দেওয়া হলে দাম কমতেও পারে।'

আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করার পরে বাজারে কী প্রভাব পড়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এটা যৌক্তিক দাম বলেই আমরা নির্ধারণ করেছি।'

তিনি বলেন, 'এখন এটা বাস্তবায়ন করার ব্যাপার। মাঝ খানে শুক্রবার-শনিবার ছিল। সব জেলা-উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সবাইকে নিয়েই আমরা এটা বাস্তবায়ন করব। হয়তো দু-চার দিন সময় লাগবে।'

'আমি মনে করি, এটা মেনে চলা ব্যবসায়ীদেরও দায়িত্ব। ব্যবসায়ীরা তো এ দেশের মানুষের ঘরে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্যই ব্যবসা করেন। সরকার এনফোর্স করবে ঠিকই, তবে ব্যবসায়ীদেরও মেনে চলা উচিত। এ জন্য কোল্ড স্টোরেজ বা পাইকারি পর্যায়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। তাহলে খুচরা পর্যায়ে প্রতিফলন হবে,' বলেন তপন।

দেখা যাচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হচ্ছে, উৎসের জায়গাগুলোতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'উৎস পর্যায়েও পর্যবেক্ষণ হচ্ছে। কোল্ড স্টোরেজের যিনি মালিক, তিনি কিন্তু আলু রাখেন না। আলু রাখেন ব্যবসায়ীরা। এখন একটু বড় ব্যবসায়ীরা আলু রাখছেন। আগে দেখা যেত কৃষকরা রাখতেন। জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে, ব্যবসায়ীদের নিয়ে স্থানীয়ভাবে তারা বসবেন। প্রথমে তাদের বুঝিয়ে বলা, তাদের দায়িত্ব বোধ সম্পর্কে সচেতন করে দেওয়া। এর পরে এনফোর্সমেন্ট।'

দেশে যে সংখ্যক ডিম উৎপাদন হয় তাতে আমদানির প্রয়োজন হয় না, তার মানে কি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিন্ডিকেটের সঙ্গে পেরে উঠছে না জন্য আমদানির অনুমতি দিলো? দাম নির্ধারণ করে দিয়ে কি দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়—গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম কিন্তু চাহিদা-জোগানের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে। দেশের মানুষের চাহিদা যদি উৎপাদনে মেটানো সম্ভব না হয় তাহলে তো আমদানি করতে হবে। আমাদের বেশির ভাগ পণ্যের কিন্তু আমদানির অনুমতি দেওয়া আছে। কিছু পণ্যে নিষেধ আছে, তার মধ্যে একটা ডিম। আমরা দেখতে চাচ্ছি, আমদানির অনুমতি দিলে আমাদের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা হয় কি না।'

Comments

The Daily Star  | English

NBR traces Tk 40,000cr in suspected laundered assets abroad

The revelation came from the Central Intelligence Cell of the tax administrator

3h ago