গত রমজানের তুলনায় এবার পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২২৩ শতাংশ

স্টার ফাইল ফটো

 রমজানের বাকি আর এক দিন। এরই মধ্যে বাজারে বেড়েছে সব রকমের জিনিসপত্রের দাম। নিত্যপণ্যের দামে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

বাজার ঘুরে দেখা যায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে, যা গত বছর ছিল ৩০-৩৫ টাকা। শতাংশের হিসেবে এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২২৩ শতাংশ।

শুধু পেঁয়াজ নয় ছোলা, সয়াবিন তেল, চিনি, খেজুরসহ অন্যান্য ফল, ডাল, মুড়ি, আলু, বেগুন, ইসবগুল, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, লেবু, পুদিনা পাতা, সস এবং জুস আরও যেসব পণ্য আছে তার সবকিছুরই দাম বেড়েছে।

এসব পণ্যের বেশিরভাগই ইফতার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

ডেইলি স্টার গত দুই দিনে রাজধানীর মিরপুর, পূর্ব শেওড়াপাড়া, কচুক্ষেত, ইব্রাহিমপুর এবং কারওয়ান বাজারসহ পাঁচটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখেছে।

কারওয়ান বাজারের পাঁচ জন দোকানদার এ প্রতিবেদককে বলেন, গত দুই দিনে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিক্রি বেড়েছে।

পণ্যের কোনো ঘাটতি না থাকলেও বেশির ভাগ পণ্যের দাম আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে বলে জানান তারা।

কারওয়ান বাজার ও কচুক্ষেতে সাধারণ জাতের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৫০০-১১০০ টাকা কেজিতে, যা গত রমজানে ছিল ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এবার পেঁয়াজের দাম ১৫৭ শতাংশ, আলুর ৫৪ শতাংশ, রসুন (আমদানি) ৬০ শতাংশ, আদা (দেশি) ৮২ শতাংশ বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারের কুমিল্লা জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. গোফরান বলেন, এ বছর সয়াবিন তেল ছাড়া প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়েছে।

তিনি বর্তমানে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকায় বিক্রি করছেন, যা গত বছর ছিল ১৭০ টাকা।

গোফরান বলেন, চিনি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়, যা গত বছর ছিল ১১৫ টাকা; মসুর ডাল ১১০-১৪০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ৯৫-১৩০ টাকা। ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ৯০ টাকা।

পেঁয়াজু তৈরিতে ব্যবহৃত খেসারি ডালের দাম ১২০ টাকা কেজি, যা গত বছর ছিল ৮০ টাকা। এছাড়া ছোলার বেসন কেজিপ্রতি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ১১০ টাকা।

তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ির বাসিন্দা মুন্নী বেগম গতকাল কারওয়ান বাজারে এসেছিলেন বাজার করতে। জিনিসপত্রের দাম শুনে চিন্তায় পড়ে যান তিনি।

তিনি বলেন, রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহের বাজার করতে এসেছিলাম। গত বছর এসব জিনিস কিনতে এক হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। এবার দেড় হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

'আমাদের তো আয় বাড়েনি, কিন্তু আমাদের খরচ বেড়ে গেছে। আমাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও, আমরা রমজানে একটু ভালো খাবারের জন্য এত বেশি খরচ করতে বাধ্য হচ্ছি।'

বেড়েছে ফলের দামও। রমজান মাসে বেশিরভাগ মানুষ খেজুর, আপেল, মাল্টা, কমলা, তরমুজ, আনারস, নাশপাতি, আঙ্গুর, ডালিম এবং পেঁপে কিনতে আসেন।

কচুক্ষেতের ফল বিক্রেতা মো. শাহজাহান জানান, তিনি এক কেজি আপেল ৩৪০ টাকা, মাল্টা ৩২০ টাকা, কমলা ৩৪০ টাকা, নাশপাতি ৩০০ টাকা, আঙুর ২৮০ টাকা, ডালিম ৪০০ টাকা, বড়ই ২০০ টাকা এবং পেঁপে ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, অধিকাংশ ফলের দাম গত বছরের তুলনায় ২০-৪০ শতাংশ বেশি।

তিনি বলেন, ডলারের দর ও আমদানি শুল্কের কারণে আমদানিকৃত ফলের দাম বেশি। দেশি ফলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে।

এছাড়া রমজানকে সামনে রেখে বেগুন, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, পুদিনা ও টমেটোর চাহিদা বেড়েছে।

বিক্রেতারা জানান, এসব জিনিসের দাম কেজিতে ২০-৪০ টাকা বেড়েছে।

বাংলাদেশের কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়, যখন বিভিন্ন জিনিসের চাহিদা বেড়ে যায়, তখন বিক্রেতারা তাদের লাভ বাড়াতে পরিস্থিতির সুযোগ নেয়।

এই সমস্যা মোকাবিলায় তিনি এসব পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং সুস্থ প্রতিযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি মনে করেন, এতে করে অন্যায্য মুনাফার জন্য পরিস্থিতিকে ব্যবহার করার যে কৌশল তারা নেয় তা বন্ধ করা সম্ভব।

Comments

The Daily Star  | English

Govt aide pushes 5G project amid graft probe

Activities of Faiz Ahmad Taiyeb, special assistant to chief adviser, raise concerns over conflict of interest, executive overreach and violations of procurement rules

12h ago