ডায়ালাইসিস ফি প্রতি বছরের মতো এ বছরও ৫ শতাংশ বাড়বে: চমেক

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) সেন্টারে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস ফি ৫ শতাংশ বাড়ছে। 
ডায়ালাইসিস ফি ৩০০ শতাংশ বাড়ছে এমন খবর শুনে চমেক হাসপাতালে গত মঙ্গলবার কিডনি রোগী ও স্বজনদের বিক্ষোভ। ছবি: রাজিব রায়হান/স্টার

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) সেন্টারে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস ফি ৫ শতাংশ বাড়ছে। 

আজ সোমবার চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, 'আমরা কখনোই পিপিপি সেন্টারে ডায়ালাইসিস ফি ৩০০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেইনি। বরং একটি মহল রোগীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ানোর উদ্দেশে এ ধরনের প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছিল।'  

'আমি গতকাল রোববার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের নির্দেশনা পেয়েছি যে পিপিপি কেন্দ্রে ডায়ালাইসিস ফি বাড়তে দেওয়া হবে না।'

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, 'আসলে আমরা কখনোই এমন সিদ্ধান্ত নেইনি। একটি মহল প্রচার করছে যে পিপিপি কেন্দ্রে ডায়ালাইসিস ফি ৩০০ শতাংশ বাড়বে। কিন্তু এটি সত্য নয়।'

'প্রতি বছরের মতো এ বছরও ফি ৫ শতাংশ বাড়বে। পিপিপি কেন্দ্র পরিচালনাকারী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রতি বছর ৫ শতাংশ করে ফি বাড়ানো হয়,' যোগ করেন তিনি।

এর আগে, ডায়ালাইসিস ফি ৩০০ শতাংশ বাড়ানোর খবর পেয়ে রোগী ও ও স্বজনদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল।

গত মঙ্গলবার চমেক হাসপাতালের সামনে কেবি ফজলুল কাদের সড়কে তারা বিক্ষোভ করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে। এ সময় পুলিশ এক রোগীর ছেলে মোস্তাকিমকে আটক করে এবং তার বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করে। 

পাঁচ দিন কারাভোগের পর গতকাল রোববার চট্টগ্রাম আদালত থেকে জামিন পান মোস্তাকিম। 

চমকে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, 'রোগীদের প্রতি সেশনের জন্য ভর্তুকি ফি হিসেবে ৫৩৫ টাকা দিতে হবে। এর আগে গত বছর তাদের ৫১০ টাকা দিতে হতো।'

তিনি বলেন, 'মূলত এ বছর প্রতি সেশনে ৫ শতাংশ হারে ২৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে।' 

এই অপপ্রচারের পেছনে কারা, জানতে চাইলে পরিচালক শামীম আহসান বলেন, 'পিপিপি সেন্টার পরিচালনাকারী কোম্পানির কিছু কর্মকর্তা তাদের বকেয়া অর্থ আদায়ের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য অপপ্রচার চালিয়েছে।'

কেন চমেক হাসপাতালে পিপিপি ডায়ালাইসিস কেন্দ্র

জানা গেছে, চমেক হাসপাতালের নেফ্রোলজি ওয়ার্ডে মাত্র ৪টি ডায়ালাইসিস মেশিন আছে এবং দিনে ৩ সেশনে সর্বোচ্চ ১২ জন রোগী ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারে। মোট ৩৬ জন রোগী নিয়মিত এই ৪টি মেশিন থেকে ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারে। তবে ডায়ালাইসিস রোগীর সংখ্যা এর ১০ গুণেরও বেশি। 

২০১৭ সালে চমেক হাসপাতালে একটি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনে ভারতীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেডস প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে একটি পিপিপি চুক্তি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

ভারতের হায়দ্রাবাদত্তিক প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেডস মূলত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সেবা সংক্রান্ত ব্যবসা করে।

চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, কোম্পানিটি ৩১টি ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপন করেছে। সেখানে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সুপারিশ করা দরিদ্র রোগীদের প্রতি সেশনে ৪৮৬ টাকা ব্যয়ে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হতো এবং সরকার প্রতি সেশনে রোগীদের জন্য ২ হাজার ১৮০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে আসছিল।

চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানিটি ১০ বছর পর কেন্দ্রটি সরকারের কাছে হস্তান্তর করবে। 

এদিকে কেন্দ্রটি রোগীদের অংশের ফি বাড়িয়ে ৫১০ টাকা করে এবং সরকারের ভর্তুকি ২৭৮৫ টাকা করা হয়।

রোগীরা সেই ফি নিয়ে অসন্তুষ্ট না হলেও, কোম্পানির কর্মকর্তারা চলতি মাস থেকে প্রথম ৪ সেশনের প্রতিটির জন্য ২ হাজার ৯৩৫ টাকা এবং বাকি ৪ সেশনের প্রতিটির জন্য ৫৩৫ টাকা দিতে হবে বলে জানায়। 

ফি বাড়ানোর এমন সংবাদ পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রোগী ও স্বজনরা।  

তবে এ বিষয়ে স্যান্ডর মেডিকেডসের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশ না করে তাদের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, তারা কোনো ফি বাড়ায়নি বরং রোগীদের জন্য সরকারের ভর্তুকি সীমিত করা হয়েছে। 

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, 'রোগীদের প্রতি সেশনের জন্য ৫৩৫  টাকা দিতে হবে এবং বাকি ফি সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে।'

Comments