লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল: সব ধরনের ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ রোগীদের

লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল: সব ধরনের ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ রোগীদের
ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

২৫০ শয্যার লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল থেকে পর্যাপ্ত ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন রোগীরা।

হাসপাতালের রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসাপত্রে উল্লেখ করা ওষুধের কিছু হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হলেও, কিছু ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে।

রোগীরা বলছেন, হাসপাতাল থেকে শুধু সরকার নিয়ন্ত্রিত অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএলের) ওষুধ সরবরাহ করা হয়। ঠিকাদারের সরবরাহ করা কোনো ওষুধ রোগীদের দেওয়া হয় না।

সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অধিকাংশই দরিদ্র। তিস্তা ও ধরলা নদীর চরাঞ্চল থেকে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন।

চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার চর শিবেরকুটি গ্রামের আহেলা বেওয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে ৪টি ওষুধ লিখে দিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে দুটি ওষুধ পেয়েছি। বাকি দুটি ওষুধ কিনতে হয়েছে বাইরে থেকে।'

তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। কখনোই পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ পাননি।

আহেলা বলেন, 'ওষুধ চাইলে কাউন্টার থেকে বলে সব ওষুধের সরবরাহ নেই।'

লালমনিরহাট শহরের শহীদ শাহজাহান কলোনি এলাকার দিনমজুর সেকেন্দার আলী (৬০) চিকিৎসা নিতে এলে চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে ৩টি ওষুধের নাম লেখেন। সেকান্দার জানান, প্রেসক্রিপশনের ৩টি ওষুধের মধ্যে দুটি ওষুধ হাসপাতাল থেকে পেয়েছেন। টাকার অভাবে বাকি একটি ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে পারেননি।

তিনি বলেন, 'আমাদের টাকা নেই। বাইরে থেকে ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই। সরকারি হাসপাতালে আসি সেবা পেতে, কিন্তু পর্যাপ্ত ওষুধ পাই না।'

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কলেজশিক্ষক আশরাফ আলী (৫৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইডিসিএলের ওষুধে সরকারি সিল থাকে তাই এসব ওষুধ বাইরে বিক্রয় করা যায় না। কিন্তু ঠিকাদারের সরবরাহকৃত এমএসআরের (মেডিসিন সাপ্লাই রিলেটেড) ওষুধে কোনো সিল থাকে না। তাই সহজে এসব ওষুধ বাইরে বিক্রি করা যায়।'

অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'হাসপাতাল থেকে এমএসআরের ওষুধ পাচার হচ্ছে অনেকদিন ধরে। তাই হাসপাতালে আসা রোগীরা এমএসআরের ওষুধ পাচ্ছেন না।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাসপাতালে এমএসআরের ওষুধ সরবরাহের ঠিকাদার নিয়োগ হয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। অনেক সময় ঠিকাদার ওষুধ সরবরাহ না করে কাগজে-কলমে সরবরাহ দেখায়। এতে সিন্ডিকেট ও ঠিকাদার দুজনেরই লাভ।'

এমএসআর ওষুধ সরবরাহকারী ঠিকাদারের প্রতিনিধি সাইদুর রহমান টিটোন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চুক্তি অনুযায়ী সবগুলো ওষুধ ২ মাস আগে সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা ২০ আইটেমের ওষুধ সরবরাহ করেছি। আমাদের দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ওষুধ সরবরাহ করা। রোগীরা ওষুধ পাচ্ছেন কি না, সেটা আমরা বলতে পারব না।'

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এমএসআরের ওষুধ সরবরাহের ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

যোগাযোগ করা হলে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের সুপারিনটেন্ডেন্ট ডা. রমজান আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারি বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ ব্যয় হয় ইডিসিএলের ওষুধ কেনার জন্য। বাকি ২৫ শতাংশ দিয়ে কেনা হয় এমএসআর ওষুধ।'

'আমরা বেশ কিছু আইটেমের ওষুধ সরবরাহ পাচ্ছি না। তাই হয়তো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দুয়েকটি ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে,' বলেন তিনি।
 

Comments

The Daily Star  | English

IMF loan tranches: Agreement with IMF at last

The government has reached a staff-level agreement with the International Monetary Fund for the fourth and fifth tranche of the $4.7 billion loan programme, putting to bed months of uncertainty over their disbursement.

11h ago