নার্সকে বেল্ট দিয়ে পেটানোর অভিযোগ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের ‍বিরুদ্ধে

নার্সকে বেল্ট দিয়ে পেটানোর অভিযোগ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের ‍বিরুদ্ধে
মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে | ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ/স্টার

মানিকগঞ্জে কোমর থেকে বেল্ট খুলে একজন সিনিয়র স্টাফ নার্সকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বাহাউদ্দিনের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার সকালে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নার্স মো. শাহীনুর রহমান শাহীন।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বাহাউদ্দিন মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে তাকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে প্রথমে গালিগালাজ এবং একপর্যায়ে কোমর থেকে বেল্ট খুলে পেটাতে থাকেন। তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশে স্টাফ নার্স সাইফুল ইসলাম তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক আউট সোর্সিংয়ের কর্মচারীদের ডেকে এনে তাকে মেরে লাশ গুম করার নির্দেশ দেন। খবর পেয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার পুলিশ সদস্যরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। আহত অবস্থায় তিনি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে গেলে তিনি তাতেও বাঁধা দেন। ঘটনার পাঁচ ঘণ্টা পর জরুরি বিভাগে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধসহ ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করেন তিনি। আবারও হামলার আশঙ্কায় হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি আইনি সহায়তা চেয়েছেন।

নির্যাতিত সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. শাহীনুর রহমান বলেন, 'হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক হাসপাতালে কম আসেন। তিনি কিছু দুর্নীতিবাজ স্টাফদের নিয়ে হাসপাতালে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। তাদের মাধ্যমে তিনি নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন। তার লোকজনের দায়িত্বে অবহেলার কারণে রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা স্থানীয় বলে রোগীরা সবসময় আমাদের কাছে ছুটে এসে নানা অভিযোগ করেন। এসব ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক স্যারের কাছে অভিযোগ দিলে তিনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আমাদের সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করেন। কেউ তার ভয়ে কিছু বলতে সাহস পায় না। এর প্রতিবাদ করি বলেই আমি তার টার্গেটে পরিণত হয়েছি।'

'২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি আমি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বদলি হয়ে আসি। তখন আরএমও (আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার) স্যার ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। তিনি আমাকে প্রতিসাক্ষরের মাধ্যমে ১১ জানুয়ারিতে যোগদানের নির্দেশ দেন। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক স্যার এসে আমাকে যোগদান থেকে বিরত রাখেন। পরে দেনদরবার করে ২০ হাজার টাকা এবং ১০ কেজি হাজারি গুড় কিনে দেওয়ার পর ১৯ জানুয়ারি আমাকে যোগদান করান।'

তিনি আরও বলেন, 'লোকবলের অভাবে হাসপাতালের কিডনি ডায়ালসিস ইউনিট দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। পরে আমিসহ হাসপাতালের ১০ জন স্টাফকে নিয়ে নিজের টাকা খরচ করে প্রতিদিন ঢাকায় গিয়ে জাতীয় কিডনি হাসপাতালে ১৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ নেই। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ শেষে আমি দায়িত্ব নিয়ে নিয়মিত কিডনি ডায়ালাইসিস রোগীদের সেবা দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে সেখান থেকে সড়িয়ে তার পছন্দের লোকদের দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তারা সময়মতো হাসপাতালে না আসার কারণে রোগীরা যথাযথ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মেডিসিন ওয়ার্ডের অবস্থাও একই রকম। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্তরাও সময়মতো হাসপাতালে আসেন না। এসব বিষয়ে কেউ কথা বললেই তার শত্রু হয়ে যান। আমিও তাই হয়েছি। তিনি কথায় কথায় আমাকে মা-বাপ তুলে গালাগালি করেন। এর প্রতিবাদ করলেই বিএনপি-জামাত বানিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন। তিনি বড় চাকরি করেন। আমি তার অধীনস্ত ছোট কর্মচারী। আমাদেরও তো বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। কিন্তু আর তো পারছি না। গরিবের কি কেউ নেই নাকি?'

'ডিইটি রোস্টার অনুযায়ী আমি আজ সকালে হাসপাতালে এসেছি। তিনি আমাকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে বলেন। তিনি আমাকে দায়িত্ব পালন করতে দিবেন না। আমি ছোট হলেও নবম গ্রেডের একজন স্টাফ। তিনি কি আমাকে সরকারি দায়িত্বপালনে বাঁধা দিতে পারেন?', বলেন শাহীনুর।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক ডা. বাহাউদ্দিন বলেন, 'বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে এখন কোনো কথা বলা সমীচীন হবে না।'

মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিল হোসেন বলেন, 'আমি ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিনিয় স্টাফ নার্স—দুজনেই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেব।'

Comments

The Daily Star  | English
NSC shop rent scam in Dhaka stadiums

Shop rent Tk 3 lakh, but govt gets just Tk 22,000

A probe has found massive irregularities in the rental of shops at nine markets of the National Sports Council (NSC), including a case where the government receives as little as Tk 22,000 in monthly rent while as much as Tk 3 lakh is being collected from the tenant. 

19h ago