আন্তর্জাতিক

বিশ্বের ৩০টিরও বেশি নির্বাচন প্রভাবিত করেছে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান

প্রতিষ্ঠানটির মালিক গর্ব করে তাদের জানিয়েছেন, তার নিয়ন্ত্রণে টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাজার হাজার ভুয়া প্রোফাইল এবং ‘সংবাদ তৈরি করার’ ক্ষমতা তার আছে।
তাল হানান। ছবি: টুইটার

হ্যাকিং, নাশকতা এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩০টিরও বেশি নির্বাচনে প্রভাব খাটিয়েছে ইসরায়েলি একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের এক কনসোর্টিয়ামের দীর্ঘ দিন ধরে চালানো গোপন অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য।

এএফপি জানায়, ফ্রান্সভিত্তিক অলাভজনক 'ফরবিডেন স্টোরিজ' এর নির্দেশনায় ব্রিটেনের গার্ডিয়ান, ফ্রান্সের লা মন্ডে, জার্মানির ডের স্পিগেল এবং স্পেনের এল পাইসসহ ৩০টি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের একটি দল এ নিয়ে অনুসন্ধান করেছে।

সাংবাদিকরা নিজেদের ক্লায়েন্ট হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির তথ্য সংগ্রহ করেন। এর কর্ণধার ৫০ বছর বয়সী তাল হানান একসময় ইসরায়েলি স্পেশাল ফোর্সে কাজ করতেন।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির মালিক গর্ব করে তাদের জানিয়েছেন, তার নিয়ন্ত্রণে টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাজার হাজার ভুয়া প্রোফাইল এবং 'সংবাদ তৈরি করার' ক্ষমতা তার আছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, জনমতের ওপর প্রভাব ফেলার জন্য টুইটার, লিঙ্কডইন, ফেসবুক, টেলিগ্রাম, জি-মেইল, ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউবে প্রায় ৪০ হাজার ভুয়া প্রোফাইল নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিষ্ঠানটি অ্যাডভান্সড ইমপ্যাক্ট মিডিয়া সলিউশন' বা এআইএমএস নামে একটি সফটওয়ার প্লাটফর্ম ব্যবহার করে। বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ড, বিটকয়েন ওয়ালেট এবং এয়ারবিএনবি-সহ অ্যামাজন অ্যাকাউন্টও রয়েছে এসব ভুয়া প্রোফাইলের।

ছদ্মবেশে থাকা সাংবাদিকদের হানান জানান, ব্ল্যাক অপস নামে পরিচিত তার প্রতিষ্ঠানের এই পরিষেবা (কয়েক হাজার ভুয়া প্রোফাইলের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনমত তৈরি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, রাজনৈতিক দল এবং বেসরকারি সংস্থার ব্যবহারের জন্য তৈরি করা। আফ্রিকা, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপজুড়ে তার প্রতিষ্ঠান সেবা দেয় বলে জানান তিনি।

ছদ্মবেশে থাকা সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'আমরা এখন আফ্রিকার একটি নির্বাচন নিয়ে কাজ করছি... আমাদের গ্রিস ও আমিরাতেও একটি করে দল আছে, আমরা ৩৩টি প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের প্রচারণা চালিয়েছি, যার মধ্যে ২৭টিতেই সফলতা এসেছে।'

প্রচারণার বেশিরভাগ, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আফ্রিকায় ছিল বলে দাবি করেন তিনি।

ক্লায়েন্টের ছদ্মবেশে থাকা সাংবাদিকরা তার অফিসে গিয়ে জানতে পারেন যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েকদিন আগে কেনিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের জিমেইল এবং টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছিল।

বিশ্বের এই ধরনের ফার্মগুলোর শক্তিশালী হ্যাকিং সরঞ্জাম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জনমত গঠনের শক্তি আগামী দিনের গণতন্ত্রের জন্য 'বিপদ' হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

Comments