আন্তর্জাতিক
অর্থনৈতিক সংকট

মন্ত্রীদের বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে তুলবে পাকিস্তান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত অর্থাৎ আগামী বছর পর্যন্ত বিলাসবহুল পণ্য কেনার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
পাকিস্তান, শাহবাজ শরীফ, আইএমএফ,
শাহবাজ শরীফ। রয়টার্স ফাইল ফটো

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেছেন, মন্ত্রিসভার সদস্যদের ব্যবহৃত সব বিলাসবহুল গাড়ি বাতিল করে নিলামে তোলা হবে। যেখানে প্রয়োজন সেখানে মন্ত্রীদের নিরাপত্তায় একটি মাত্র গাড়ি দেওয়া হবে।

আজ বুধবার পাকিস্তান সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ বেশ কয়েকটি কৃচ্ছ্রতামূলক উদ্যোগ ঘোষণা করেছেন শাহবাজ শরীফ। তিনি দাবি করেছেন, এগুলো দেশটিকে বছরে ২০০ বিলিয়ন রুপি সাশ্রয়ে সহায়তা করবে।

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা বেতন নেবেন না

ইসলামাবাদে ফেডারেল মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে শাহবাজ শরীফ বলেন, 'মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টারা স্বেচ্ছায় তাদের বেতন-ভাতা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন থেকে সব মন্ত্রী তাদের নিজস্ব টেলিফোন, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের বিল পরিশোধ করবেন।'

বিদেশ সফরে পাঁচতারকা হোটেলে থাকতে পারবেন না

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ফেডারেল মন্ত্রীরা অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ বা বিদেশে যাওয়ার সময় ইকোনমিক ক্লাসে ভ্রমণ করবেন। সাপোর্ট স্টাফদের আর রাষ্ট্রীয় সফরে যেতে দেওয়া হবে না এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা বিদেশ সফরের সময় পাঁচতারকা হোটেলে থাকতে পারবেন না।'

মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ১৫ শতাংশ কমছে

শাহবাজ শরীফ বলেন, 'মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও উপ-বিভাগের বর্তমান ব্যয় ১৫ শতাংশ কমানো হবে। এ সিদ্ধান্তের আলোকে সংশ্লিষ্ট প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তারা তাদের বাজেটে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করবেন।'

বিলাসবহুল পণ্য কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত অর্থাৎ আগামী বছর পর্যন্ত বিলাসবহুল পণ্য কেনার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকবে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সব ধরনের নতুন গাড়ি কেনার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকবে।

নিরাপত্তা গাড়ি দেওয়া হবে না

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেসব সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন, যারা ইতোমধ্যে গাড়ি মনিটাইজেশন সেবা নিয়েছেন সেগুলো ফেরত আনা হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের আর নিরাপত্তার গাড়ি দেওয়া হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে একটি কমিটি পরিস্থিতির বিবেচনা করে কেস-টু-কেস ভিত্তিতে নিরাপত্তা গাড়ি সরবরাহের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

ভ্রমণ ব্যয় কমাতে টেলিকনফারেন্সিং

তিনি জোর দিয়ে বলেন, যেকোনো ক্যাবিনেট সদস্য বা সরকারি কর্মকর্তা বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করবেন না। এছাড়া ভ্রমণ ব্যয় কমাতে টেলিকনফারেন্সিংয়ে উৎসাহিত করা হবে।

ফেডারেল সরকারে নতুন বিভাগ নয়

শাহবাজ শরীফ বলেন, 'ফেডারেল সরকারের বিষয়ে কোনো নতুন বিভাগ তৈরি করা হবে না। আগামী ২ বছর নতুন কোনো প্রশাসনিক ইউনিট, বিভাগ বা সাব-ডিভিশন তৈরি করা হবে না। একটি 'সিঙ্গেল ট্রেজারি অ্যাকাউন্ট' করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে।'

সাড়ে ৭টায় অফিস খোলার পরামর্শ

'গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংরক্ষণে গ্রীষ্মকালে সকাল সাড়ে ৭টায় অফিস খোলার পরামর্শ গ্রহণ করা হয়েছে।'

সরকারি কর্মচারীদের একাধিক প্লট নয়

সরকারি কর্মচারীদের একাধিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে না বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'আগামীকাল থেকে তা বাস্তবায়ন করা হবে।'

সরকারি ইভেন্টে কেবল একটি খাবার

তিনি বলেন, 'খাবারের ক্ষেত্রে সরকারি ইভেন্টগুলোতে কেবল একটি খাবারের অনুমতি দেওয়া হবে। ইসলামাবাদের সব মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও ফেডারেল ক্যাবিনেটে একটি মাত্র খাবার থাকবে। যদি চায়ের সময় হয়, তখন কেবল চা এবং বিস্কুট সরবরাহ করা হবে। তবে বিদেশি অতিথি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু, তারপরও আমরা সতর্কতা অবলম্বন করবো... কোনোভাবেই এটা বিলাসবহুল করা যাবে না।'

শাহবাজ শরীফ বলেন, 'এই উদ্যোগগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা হবে এবং নতুন অর্থবছরের বাজেটের সময় 'অতিরিক্ত ব্যবস্থা' নেওয়া হবে। ফেডারেল ক্যাবিনেট এবং আমি পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি, ৪টি প্রদেশের প্রধান বিচারপতি ও আদালত এবং মুখ্যমন্ত্রীদের তাদের প্রতিষ্ঠান ও সরকারে একই ধরনের ব্যবস্থা বাস্তবায়নের অনুরোধ করছি।

এর আগে, গত সোমবার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি পরিষদ আইএমএফ-নির্দেশিত অর্থ (সম্পূরক) বিল-২০২৩ পাস করেছে। যেখানে অতিরিক্ত ১৭০ বিলিয়ন টাকা কর আরোপের কথা বলা হয়েছে।

ডন বলছে, পাকিস্তান এই সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে একটি কর্মী পর্যায়ের চুক্তির দিকে নজর রাখছে। এটি অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে বহুপ্রতীক্ষিত ঋণের পথ প্রশস্ত করবে। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে এবং দেশটি ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে লড়াই করছে। ফলে, পাকিস্তানের তহবিল প্রয়োজন। কারণ, বর্তমান রিজার্ভ ৩ সপ্তাহের নিয়ন্ত্রিত আমদানি-রপ্তানির জন্য যথেষ্ট নয়।

Comments