জাপানে ভেন্ডিং মেশিনে বিক্রি হচ্ছে ভালুকের মাংস

জাপানে এতদিন ভেন্ডিং মেশিনে তিমির মাংস, ক্যানড শামুক বা ভোজ্য পোকামাকড় পাওয়া যেত। তবে এবার যোগ হয়েছে বুনো ভালুকের মাংস।
উত্তর আকিতা প্রিফেকচারের সেম্বোকুতে ভেন্ডিং মেশিনটি স্থাপন করেছে স্থানীয় রেস্তোরাঁ সোবা গোরো। ছবি: সংগৃহীত

জাপানে এতদিন ভেন্ডিং মেশিনে তিমির মাংস, ক্যানড শামুক বা ভোজ্য পোকামাকড় পাওয়া যেত। তবে এবার যোগ হয়েছে বুনো ভালুকের মাংস।

দেশটির এক গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসি আজ সোমবার জানায়, সেম্বোকু শহরের একটি ভেন্ডিং মেশিনে স্থানীয় কালো ভালুকের মাংস পিস আকারে বিক্রি হচ্ছে।

মাইনিচি শিম্বুনের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি ২৫০ গ্রাম চর্বিযুক্ত বা চর্বিহীন ভালুকের মাংস কিনতে ক্রেতাদের গুণতে হচ্ছে ২ হাজার ২০০ ইয়েন (১৭ ডলার)।

এশিয়াটিক কালো ভালুককে আন্তর্জাতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। তবে জাপান বলছে, তারা এই ভালুক শিকারের পরিমাণ কমিয়ে আনছে।

উত্তর আকিতা প্রিফেকচারের সেম্বোকুতে ভেন্ডিং মেশিনটি স্থাপন করেছে স্থানীয় রেস্তোরাঁ সোবা গোরো। স্থানীয় শিকারিরা আশপাশের পাহাড়ে যেসব ভালুক হত্যা করেন, সেখান থেকে প্রতি সপ্তাহে ১০-১৫ প্যাকেট মাংস বিক্রি হয় ভেন্ডিং মেশিনটি থেকে।

তবে শিকারের মৌসুম ফুরিয়ে এলে এর স্টকও কমে যায়।

মাথাপিছু বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক ভেন্ডিং মেশিন আছে জাপানে। ছোট ছোট গলিপথ ছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রামেও রয়েছে অসংখ্য মেশিন।

জাপানে এসব ভেন্ডিং মেশিনকে সাধারণত জিদু হানবাইকি বা জিহানকি নামে ডাকা হয়। ১৯৬০ এর দশকের পর থেকে এগুলো দেশটিতে ব্যাপক জনপ্রিয় ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠে। 

তবে জানুয়ারিতে টোকিওর কাছে বন্দর শহর ইয়োকোহামায় একটি মনুষ্যবিহীন আউটলেট যখন ৩টি ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করে এবং এক হাজার ইয়েনের বিনিময়ে বিভিন্ন জাতের তিমির মাংস বিক্রির প্রস্তাব দেয়, তখন এটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।

সেম্বোকুর ভেন্ডিং মেশিনটি তাজাওয়াকো স্টেশনের প্রবেশপথে স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে অন্যান্য ট্রেনের মতো দেশটির বিখ্যাত শিনকানসেন বা বুলেট ট্রেনও থামে। মূলত বুলেট ট্রেনের যাত্রীরাই সেখান থেকে মাংস কেনে।

জাপানে লাইসেন্সপ্রাপ্ত শিকারিদের গুলি করে ভালুক হত্যার অনুমতি রয়েছে। তবে টোকিওর প্রায় সব রেস্তোরাঁয় এ প্রাণীর মাংস পাওয়া যায় না।

অপারেটররা জানান, গত নভেম্বরে সেম্বোকুতে ভেন্ডিং মেশিনটি স্থাপন করে ভালুকের মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। তবে টোকিওর পার্শ্ববর্তী কান্টো অঞ্চল থেকেও মানুষ এর খোঁজ করছে।

সোবা গোরোর এক প্রতিনিধি মাইনিচি শিম্বুনকে বলেন, 'ভালুকের মাংসের স্বাদ ভালো এবং ঠাণ্ডা হলেও এটি শক্ত হয় না। এর দ্বারা স্টু থেকে স্টেক পর্যন্ত প্রায় সবই তৈরি করা যায়।'

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাবার সংকটের কারণে ভালুকেরা দিনে দিনে বন ছেড়ে শহরে প্রবেশ করছে, যা প্রাণীটিসহ স্থানীয়দের জন্য হুমকিস্বরূপ।

২০২২ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে উত্তর মিয়াগি প্রিফেকচারে ভালুকের আক্রমণের ৫টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে আহত হন ৭ জন।

২০০১ সালের পর থেকে যা ছিল সর্বোচ্চ আক্রমণের ঘটনা।

জাপানের পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানায়, মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় গত ৭ বছরে দেশটিতে ৩ থেকে ৭ হাজার ভালুক মারা গেছে।

বর্তমানে জাপানে প্রায় ১৫ হাজার কালো ভালুক রয়েছে বলে ধারনা করা হয়। তবে সরকার তাদের ১২ শতাংশ পর্যন্ত শিকারের অনুমতি দেয়।

Comments