বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ: কতটা ছড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে

প্যারিসে গাজার সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।

গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলো থেকে নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিচ্ছিন্ন করার দাবি জানিয়ে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল সেটি ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাসসহ অন্যান্য রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়েছে।

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আহত অসংখ্য। সেইসঙ্গে অনাহারে দিন পার করছেন গাজার মানুষ। এসব ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা গাজায় ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন।

আল জাজিরা গতকাল তাদের এক্সপ্লেইনারে জানায়, এই বিক্ষোভ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। গত বছর ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীরা গাজার সমর্থনে মিছিল করছে। কলাম্বিয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেওয়ার পর এই বিক্ষোভ ফ্রান্স থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

কোথায় কোথায় হচ্ছে বিক্ষোভ

ফিলিস্তিনের সমর্থনে ফ্রান্সের প্যারিসে সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। সেইসঙ্গে সায়েন্সেস পো থেকে প্যালেস্টাইন কমিটি একটি বিক্ষোভের আয়োজন করে যেখানে শিক্ষার্থীরা বুধবার প্রায় ১০টি তাঁবু স্থাপন করে। পুলিশি ধরপাকড় সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার ফের জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা।

অস্ট্রেলিয়ায়, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত মঙ্গলবার ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং শুক্রবারেও তাদের সেই বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। এছাড়া মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার তাদের মূল ক্যাম্পাসের দক্ষিণ লনে তাঁবু খাটায়।

ইতালির রোমে সাপিয়েনজা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত ১৭ এবং ১৮ এপ্রিল বিক্ষোভ, অবস্থান ধর্মঘট এবং অনশন করে।

১৯ এপ্রিল রাত থেকে যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ডে অবস্থিত ক্যাম্পাস পিয়াজা দখল করে রেখেছে 'ওয়ারউইক স্ট্যান্ডস উইথ প্যালেস্টাইন' নামে  ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপ। সোমবার ইংল্যান্ডের লেস্টারে একটি বিক্ষোভ হয় যাতে লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন প্যালেস্টাইন সোসাইটি অংশ নেয়।

গত মাসে লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টতার প্রতিবাদে একটি ক্যাম্পাস ভবন দখল করে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি কী?

প্যারিস ইনস্টিটিউট অফ পলিটিক্যাল স্টাডিজ নামে পরিচিত, সায়েন্সেস পো-এর শিক্ষার্থী হিচাম আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, 'আমাদের কয়েকটি দাবির একটি হলো ইসরায়েল রাষ্ট্রের সাথে এ প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক এবং আর্থিক সমস্ত সম্পর্কের তদন্ত শুরু করতে হবে'।

তিনি আরও বলছিলেন, পুলিশের মারমুখি আচরণের কারণে ফ্রান্সে ফিলিস্তিন নিয়ে কথা বলা 'অত্যন্ত কঠিন' হয়ে পড়েছে।

আয়োজকরা আরও চান সায়েন্সেস পো ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাক।

সরবোনের শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করার জন্য ফরাসি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের খবরে বলা হয়েছে, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে তাদের ইনস্টিটিউটের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানিয়েছেন।

ওয়ারউইকের শিক্ষার্থী পরিচালিত সংবাদপত্র দ্য বোয়ার জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের দাবি, ইসরায়েলের 'গণহত্যায়' অর্থায়ন করছে এমন চিহ্নিত সব প্রতিষ্ঠানের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন সম্পর্ক ছিন্ন করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিক্ষোভকারী এক শিক্ষার্থী দ্য বোয়ারকে জানিয়েছেন, মার্কিন বিক্ষোভ তাদের উজ্জীবিত করেছে।

সোমবার লেস্টারে এলবিট সিস্টেমস ইউকের ড্রোন কারখানার বাইরে কারখানাটি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ হয়। গত মাসে লিডসের ছাত্র বিক্ষোভকারীরা গাজা যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে কাজ করা জাকারিয়া ডয়েচ নামে এক ইহুদি ধর্মগুরুকে বরখাস্ত করার দাবি জানায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশি অভিযান হচ্ছে কি?

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, বুধবার সায়েন্সেস পো কর্তৃপক্ষ শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নিতে 'অসংখ্যবার চেষ্টা' চালানোর পর পুলিশ বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

ইনস্টিটিউটের ফিলিস্তিন কমিটি বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে যে 'নিরাপত্তা বাহিনীর ৫০ জনেরও বেশি সদস্য বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছে এবং প্রায় ১০০ পুলিশ কর্মকর্তা বাইরে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন'।

হিচাম জানান, তিনি ও তার সহপাঠীরা তিন দিন ধরে তাদের শিক্ষপ্রতিষ্ঠানটিতে অবস্থান করছেন। তিনি বলছিলেন, 'আমরা একটি ভবনে গিয়েছিলাম, সেখানে তারা (বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ) পুলিশ ডেকেছিল, তাই আমরা মূল ভবনে চলে যাই। তবে আমি মনে করি, যত বেশি দমন-পীড়ন ঘটছে, তত বেশি মানুষ সংগঠিত হচ্ছে। আগে হয়তো ৩০০ জন ছিলাম, এখন ৬০০ জন'।

বৃহস্পতিবার আল জাজিরার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সরবোনের শিক্ষার্থীদের দাঙ্গা পুলিশ ঘিরে রেখেছে।

সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলছিলেন, 'যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে খোলামেলা আলোচনা না করব ততক্ষণ এটি চলতে থাকবে।

প্যারিসের প্যান্থিয়ন-সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক আন্দোলনের বৈশ্বিক ইতিহাস বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এরাল্ডো সুজা ডস সান্তোস, বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্রান্সে বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় পুলিশি দমনপীড়ন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
education in Bangladesh

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

13h ago