দুর্ঘটনার জেরে ৪৮৭ মিলিয়ন ডলার জরিমানার মুখে বোয়িং

২০১৮ ও ২০১৯ সালে বোয়িং উড়োজাহাজের দুইটি ফ্লাইট বিধ্বস্ত হয়ে মোট ৩৪৬ জন নিহত হন।

দুইটি ফ্লাইট বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাকে 'প্রতারণা' হিসেবে অভিহিত করে উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনতে যাচ্ছে মার্কিন বিচার বিভাগ। 

গতকাল রোববার এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

এ বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই সূত্র রয়টার্সকে জানায়, প্রতিষ্ঠানটিকে দায় স্বীকার করে নিতে অথবা বিচারিক কার্যক্রমের মুখোমুখি হওয়ার বিকল্প দেওয়া হবে। 

বিচার বিভাগ বোয়িংকে একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে। এই প্রস্তাবে রয়েছে দায় স্বীকার, ৪৮৭ মিলিয়ন ডলারের অর্থদণ্ড ও তিন বছর বোয়িংয়ের নিরাপত্তা ও সুশাসন প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষ অডিট মেনে নেওয়া।

এই প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার জন্য বোয়িংকে এ সপ্তাহের শেষ দিন পর্যন্ত সময়য় দেওয়া হবে এবং এতে দরকষাকষির কোনো সুযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছেন সূত্ররা। বোয়িং যদি দায় স্বীকার করতে সম্মত না হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা হবে।

এ বিষয়ে বোয়িং ও বিচার বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে রয়টার্স। কিন্তু কোনো পক্ষই মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।

২০২১ সালে বোয়িং একটি চুক্তিতে সাক্ষর করেছিল, যার ফলে প্রতিষ্ঠানটি ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের উড়োজাহাজে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে প্রতিষ্ঠানটি দায়মুক্ত থাকবে। তবে এই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করায় বিচার বিভাগ বোয়িং এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

২০১৮ ও ২০১৯ সালে বোয়িং উড়োজাহাজের দুইটি ফ্লাইট বিধ্বস্ত হয়ে মোট ৩৪৬ জন নিহত হন।

ইতোমধ্যে নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। বিচার বিভাগের এই সিদ্ধান্তে বোয়িং এর সমস্যা আরও ঘনীভূত হয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এতে প্রতিষ্ঠানটি আরও আর্থিক ক্ষতি ও সরকারের কাছ থেকে বাড়তি নজরদারির মুখোমুখি হবে।

দায় স্বীকার করে নিলে ভবিষ্যতে বোয়িং সরকারি কাজ পাওয়ার যোগ্যতা হারাতে পারে। মার্কিন সামরিক বাহিনী বোয়িংয়ের আয়ের বড় উৎস।

বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজ। ছবি: বোয়িং ডট কম থেকে সংগৃহীত
বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজ। ছবি: বোয়িং ডট কম থেকে সংগৃহীত

কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দেওয়া হলেও বোয়িংকে সেই সুবিধা দেবে কী না মার্কিন সেনাবাহিনী, সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। এটি নির্ভর করবে বিচার বিভাগের চুক্তিতে কী কী উল্লেখ করা আছে, তার ওপর।

রোববার এই দুই দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যদের কাছে বোয়িং বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার বিষয়টি জানিয়েছে বিচার বিভাগ।

জানুয়ারিতে অপর এক দুর্ঘটনায় ফ্লাইট চলার সময় প্যানেল খুলে আসায় বোয়িং এর উড়োজাহাজের নিরাপত্তা ও গুণগত মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

৫ জানুয়ারিতে আলাস্কা এয়ারলাইন্সের ৭৩৭ ম্যাক্স নাইন জেট উড়োজাহাজের একটি প্যানেল খুলে এসেছিল। ২০২১ সালে বিচার বিভাগের সঙ্গে বোয়িংয়ের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার দুইদিন আগেই এই দুর্ঘটনা ঘটে।

উল্লেখিত চুক্তির কারণে এর আগের দুইটি মারাত্মক দুর্ঘটনায় বোয়িং এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব ছিল না।

প্রস্তাবিত নতুন চুক্তিতে ৪৮৭ দশমিক দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরিমানার কথা বলা হয়েছে। তবে বোয়িংকে আপাতত এই জরিমানার অর্ধেক অর্থ পরিশোধ করলেই চলবে। এর আগে লায়ন এয়ার ও ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের দুর্ঘটনার জন্য দেওয়া জরিমানার বিপরীতে বাকি অর্থ ঋণ হিসেবে পাবে বোয়িং।

এ ধরনের অপরাধের জন্য এটাই সর্বোচ্চ অর্থদণ্ডের পরিমাণ।

প্রস্তাবের শর্ত অনুযায়ী, বোয়িংকে হয়তো ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরও কিছু অর্থ জরিমানা দিতে হতে পারে। এই পরিমাণটি বিচারক নির্ধারণ করবেন। সঙ্গে তিন বছরের প্রবেশনেও পাঠানো হতে পারে বোয়িংকে।

চুক্তির অপর শর্ত হতে পারে বোয়িং এর পরিচালনা পর্ষদকে ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যদের মুখোমুখি হতে বাধ্য করা।

২০২১ সালে বিচার বিভাগের সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে আড়াই বিলিয়ন ডলার জরিমানা দিয়েছিল বোয়িং। যার ফলে ৭৩৭ ম্যাক্সের ত্রুটিপূর্ণ নকশার বিপরীতে প্রতারণার অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি পায় প্রতিষ্ঠানটি।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, তিন বছর পর্যন্ত বোয়িংকে এর শর্তগুলো মেনে চলার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছিল, যার মেয়াদ শেষ হয় ২০২৪ এর ৭ জানুয়ারি। তবে ২০২৩ এর মে মাসে বিচার বিভাগ চিহ্নিত করে যে বোয়িং এই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে, যার ফলে এখন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে কোনো বাধা নেই।

Comments

The Daily Star  | English

Saber Hossain Chowdhury arrested

The Detective Branch of police today arrested Saber Hossain Chowdhury, former environment forest and climate change minister and Dhaka-9 lawmaker, at the capital’s Gulshan

3h ago