মার্কিন জেন জি’র কাছে জনপ্রিয় কমলা হ্যারিস

মেরিল্যান্ডে পৌঁছে ভক্তদের উদ্দেশে হাত নাড়ছেন কমলা হ্যারিস। ছবি: রয়টার্স
মেরিল্যান্ডে পৌঁছে ভক্তদের উদ্দেশে হাত নাড়ছেন কমলা হ্যারিস। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বদলে সুপারিশ করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের নাম। 'বুড়ো' বাইডেনের প্রতি বিমুখ হলেও, যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ প্রজন্ম অপেক্ষাকৃত কম বয়সী কমলা হ্যারিসের (৫৯) প্রতি দ্রুত ঝুঁকে পড়ছে।

আজ রোববার বার্তাসংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে। 

১৯৯৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যাদের জন্ম, তাদেরকে 'জেনারেশন জি' বা সংক্ষেপে জেন জি বলা হয়। কমলা হ্যারিস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হতে পারেন, এমন সম্ভাবনায় এই প্রজন্মের ভোটারদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে।

তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কমলার প্রতি সমর্থন জানিয়ে পোস্ট করছেন। এর আগে এই প্রজন্ম ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা দেখিয়েছিল।

'উই নিড আ কমলানোমেনোন' (আমাদের একটি কমলাকান্ড দরকার), 'জেন জি ফিলস দ্য কমলাভ' (জেনজি কমলার প্রতি ভালোবাসা অনুভব করে) ও অন্যান্য তারুণ্যদীপ্ত শ্লোগানে ভরে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো।

বেশ কয়েক মাস ধরেই তরুণদের প্রগতিশীল সংগঠনগুলো সতর্ক করছিল, যে বাইডেনের প্রতি তরুণ ভোটারদের বিতৃষ্ণা রয়েছে এবং তার উচিৎ এই প্রজন্মের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা তৈরিতে আরও উদ্যোগ নেওয়া। তরুণ প্রজন্মের সমস্যাগুলো বুঝে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করা। তবে বাইডেন এতে তেমন একতা কর্ণপাত করেননি।

তরুণ-তরুণীরা এখন আশা করছেন, কমলা হ্যারিস তাদের মন জয় করে নেবেন।

গত রোববার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের তারুণ্যনির্ভর সংগঠনগুলো কমলার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। অ্যারিজোনা, উইসকনসিন, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, মিনেসোটা, নর্থ ক্যারোলাইনা ও পেনসিলভানিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যের নেতারা সরে দাঁড়ানোর জন্য বাইডেনকে ধন্যবাদ জানান এবং নতুন ও অপেক্ষাকৃত তরুণ এক প্রার্থীর পেছনে জমায়েত হওয়ার বিষয়টি উদযাপন করেন। শুক্রবার ১৭টি তারুণ্যনির্ভর সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত একটি জোট কমলার প্রতি সমর্থন জানায়।

বিশ্লেষকদের মতে, কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাজ্যে তরুণ ভোটাররাই জয়-পরাজয়ের ব্যবধান সৃষ্টি করবেন। যার ফলে রিপাবলিকান পার্টির ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাটদের কমলা উভয়ই তরুণ ভোটারদের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন।

শনিবার আটলান্টায় জেন জি অধিকারকর্মী ও নির্বাচিত কর্মকর্তাদের এক সম্মেলনে কমলা হ্যারিসের সংক্ষিপ্ত ভিডিও বিবৃতি দেখানো হয়।

বার্তায় কমলা বলেন, 'আমরা জানি, তরুণদের ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর আমরা আরও জানি যে এ বিষয়টিকে হালকা করে নেওয়ার কোনো উপায় নেই।'

তিনি ভিডিওতে বন্দুকের নিরাপদ ব্যবহার, গর্ভপাতের অধিকার, এলজিবিটিকিউ অধিকার ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কাজ করার অঙ্গীকার জানান।

অপরদিকে ট্রাম্প ফ্লোরিডার এক সম্মেলনে কমলা হ্যারিসের কড়া সমালোচনা করেন। টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ আয়োজিত এই সম্মেলনের মূল সূর ছিল ধর্মবিশ্বাস।

তিনি কমলাকে 'অকর্মণ্য' ও 'কট্টর বামপন্থি' ভাইস প্রেসিডেন্ট বলে অভিহিত করেন। তিনি অঙ্গীকার করেন, দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে এসে ধর্মপ্রাণ মার্কিন নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবেন।

নির্বাচনী প্রচারণায় কমলা হ্যারিস। ছবি: রয়টার্স
নির্বাচনী প্রচারণায় কমলা হ্যারিস। ছবি: রয়টার্স

'আপনাদের ভোটের মাধ্যমে আমি সর্বক্ষেত্রে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করব। আমি আমাদের স্কুল, সামরিক বাহিনী, সরকার, কর্মক্ষেত্র, হাসপাতালে ও অন্যান্য প্রকাশ্য জায়গায় খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের অধিকার ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকারের সুরক্ষা দেব', যোগ করেন ট্রাম্প।

এই রক্ষণশীল গোষ্ঠীটি হাইস্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করে থাকে।

হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল ইন্সটিটিউট অব পলিটিক্সের সমীক্ষা বিষয়ক পরিচালক জন ডেল্লা ভলপে জানান, তিনি তরুণদের মাঝে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে ঘিরে নতুন এক ধরনের উদ্দীপনা দেখতে পাচ্ছেন, যা এর আগে সর্বশেষ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রচারণার সময়য় দেখেছিলেন।

এখন পর্যন্ত তরুণদের মাঝে কমলা বা ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা নিয়ে তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য জরিপ চালানো হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তা সত্ত্বেও, আমরা ওবামাকে ঘিরে যেরকম আশাবাদ দেখেছিলাম, তেমনটাই এখন দেখতে পাচ্ছি।'

তিনি এবং আরও কয়েকজন তরুণ নেতা জানান, কমলার আবির্ভাবে তরুণ ভোটাররা প্রথম বারের মতো ভাবছেন যে তাদের ভোট বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

ভল্পে বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে তারা রাজনীতি, দেশ কোনদিকে যাচ্ছে—এসব বিষয় নিয়ে নিস্পৃহ ছিল। কিন্তু একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারলেন, সব কিছুই বদলে গেছে।'

বাইডেন সরে যাওয়ার পর নিউইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা ও সিএনএনের পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে বর্তমান প্রেসিডেন্টের চেয়ে কমলার বিষয়ে সামান্য বেশি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে তরুণ-তরুণীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ডেমোক্র্যাটদের ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় মুরালিধরন বলেন, 'বাইডেনের বিদায় ও কমলার আগমনে আমার বুক থেকে একটি বড় ভার নেমে গেছে।'

মুরালিধরন জানান, বেশ কয়েকমাস ধরে কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচারণা চালালেও বাইডেন সম্পর্কে তাদের নিস্পৃহ মনোভাবে পরিবর্তন আসেনি। তার বরং বামপন্থিদের প্রতি ঝুঁকে পড়ছিলেন।

তবে কমলা হ্যারিসের প্রার্থিতার সংবাদে পরিস্থিতি বদলেছে বলে জানান তিনি।

জেন জি ভোটারদের সংগঠন ভোটার্স অব টুমরোর (আগামী দিনের ভোটার) নির্বাহী পরিচালক সান্তিয়াগো মেয়ার বলেন, 'জেন জি ভিপি হ্যারিসকে ভালোবাসে, আর ভিপি হ্যারিস জেন জিকে ভালোবাসে। তাই আমরা তার সঙ্গ একাজ করতে প্রস্তুত।'

Comments

The Daily Star  | English

US to make history either way

Kamala Harris and Donald Trump launched a final frenzied campaign blitz yesterday, hitting must-win Pennsylvania on the last day of a volatile US presidential race that polls say is hurtling towards a photo finish.

9h ago