হানিয়ার দাফন দোহায়, জানাজা পড়াবেন খামেনি

মঙ্গলবার ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান যোগ দিতে তেহরানে অবস্থান করছিলেন হানিয়া। 
হানিয়ার মৃত্যুতে ইরানে ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
হানিয়ার মৃত্যুতে ইরানে ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

ইরানের রাজধানীতে প্রয়াত হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার শেষকৃত্য শুরু হয়েছে। তেহরানে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান হানিয়া।

আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

সকাল থেকেই শোকসন্তপ্ত মানুষ হানিয়ার ছবিযুক্ত পোষ্টার ও ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে সিটি সেন্টারে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জমায়েত হতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন এএফপির সাংবাদিকরা।

দোহায় হানিয়ার মরদেহ দাফন করা হবে।

এর আগে তেহরানে জানাজার নামাজ পড়াবেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।

গতকাল তিনি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে 'কঠোর শাস্তি' দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

এ ছাড়া খামেনি আরও বলেন, 'ইরানের ভূখণ্ডে হানিয়ার রক্ত ঝরেছে, প্রতিশোধ নেওয়া এখন আমাদের কর্তব্যে পরিণত হয়েছে।'

হানিয়ার মৃত্যুতে বুধবার থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে তেহরান।

বুধবার ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী হানিয়া ও তার এক দেহরক্ষী নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে। স্থানীয় সময় ভোররাত ২টায় ইরানের রাজধানীতে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যদের জন্য নির্মিত এক বাড়িতে বিমান হামলায় হানিয়া নিহত হন।

হামাস ও ইরান ইসরায়েলকে এই হামলার জন্য দায়ী করেছে। তবে এখনো এই হামলার দায় স্বীকার করেনি ইসরায়েল।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

এর কয়েক ঘণ্টা আগেই লেবাননের রাজধানী বৈরুতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালিয়ে শীর্ষ হিজবুল্লাহ কমান্ডার ফুয়াদ শোকরকে হত্যা করে ইসরায়েল।

এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসরায়েল।

মঙ্গলবার ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান যোগ দিতে তেহরানে অবস্থান করছিলেন হানিয়া। 

ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান গতকাল বলেন, 'জিয়নবাদীরা (ইসরায়েল) শিগগির তাদের এই কাপুরুষোচিত ও জঙ্গি কার্যক্রমের পরিণাম ভোগ করবে।'

হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য মুসা আবু মারজুক প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করে বলেন, 'আমাদের নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার ঘটনা একটি কাপুরুষোচিত কাজ এবং এর সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।'

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে এই অঞ্চলে অস্থিরতা কমানো ও গাজায় যুদ্ধবিরতি চালুর আহ্বান জানানো হয়েছে।

তবে অনেক বিশ্লেষকের মতে, হামাসের মধ্যপন্থি নেতা হানিয়ার মৃত্যুতে যুদ্ধবিরতি চালুর উদ্যোগ বড় আকারে ক্ষতির শিকার হয়েছে।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও যুদ্ধবিরতি চুক্তির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী শেখ মোহাম্মেদ বিন আবদুলরাহমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, 'মধ্যস্থতা কীভাবে সফল হবে যখন এক পক্ষ অপর পক্ষের প্রতিনিধিকে হত্যা করে?'

ইরাকে হানিয়ার গায়েবানা জানাজা । ছবি: এএফপি
ইরাকে হানিয়ার গায়েবানা জানাজা । ছবি: এএফপি

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এই হামলায় এক হাজার ১৯৭ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ।

হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫১ জন মানুষ, যাদের ১১১ জন এখনো গাজায় আটক আছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, জিম্মিদের মধ্যে ৩৯ জন ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন।

সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার ও প্রতিশোধমূলক গণহত্যা শুরু করেছে ইসরায়েল। এই হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৯ হাজার ৪৪৫ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষ। হতাহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Comments