পাকিস্তানে ইন্টারনেটের ধীরগতির জন্য ভিপিএনকে দায়ী করল সরকার

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, রাষ্ট্র চীনের কায়দায় ইন্টারনেট ফায়ারওয়াল চালু করছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ওপর আরও ভালো করে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি প্রতিষ্ঠা করা যাবে।
তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শাজা ফাতিমা। ছবি: ডন
তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শাজা ফাতিমা। ছবি: ডন

পাকিস্তানে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ইন্টারনেট সেবা ধীরগতিতে চলছে। ধীরগতির পেছনে বেশ কিছু কারণ আলোচনায় থাকলেও সরকার বলছে ভিপিএন ব্যবহারের কারণেই গতি কমেছে এই সেবার।

আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, রাষ্ট্র চীনের কায়দায় ইন্টারনেট ফায়ারওয়াল চালু করছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ওপর আরও ভালো করে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি প্রতিষ্ঠা করা যাবে।

তবে কর্মকর্তারা এই দাবি অস্বীকার করে জানিয়েছেন, ভিপিএনের (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) অবাধ ব্যবহারেই ইন্টারনেটের গতি কমেছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তান ও এশিয়ার অন্যান্য দেশে ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধে সরকারের জনপ্রিয় হাতিয়ার হচ্ছে ইন্টারনেট বন্ধ করা বা এর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা।

গত বছর দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ দেখা দেয়। সে সময় থেকেই সরকার সড়কের ও ডিজিটাল বিক্ষোভ দমনে একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করেছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে, কিছু কিছু জায়গায় ইন্টারনেটের গতি কমিয়েছে।

ফেব্রুয়ারি থেকে 'জাতীয় নিরাপত্তার' অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে ইলন মাস্কের এক্স (সাবেক টুইটার)।

ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এক্সে অত্যন্ত জনপ্রিয়। দলের সমর্থকরাও এটি ব্যবহার করে থাকেন। প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ ফলোয়ার আছে ইমরানের।

রোববার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শাজা ফাতিমা জানান, সরকার ইন্টারনেটের ধীরগতির জন্য দায়ী নয়।

তিনি জানান, তার দল ইন্টারনেট সেবাদাতা ও মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে 'নিরলসভাবে' কাজ করে যাচ্ছে, যাতে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়।

ফাতিমা বলেন, একটি 'বিশাল জনগোষ্ঠী' ভিপিএন ব্যবহার করছে, যার ফলে 'নেটওয়ার্কের ওপর চাপ পড়ে ইন্টারনেট স্লো হয়ে গেছে।'

ইসলামাবাদের বাজারে ভিপিএন দিয়ে 'নিষিদ্ধ' এক্স ব্যবহার করছেন এক পাকিস্তানি ব্যবসায়ী। ছবি: এএফপি
ইসলামাবাদের বাজারে ভিপিএন দিয়ে 'নিষিদ্ধ' এক্স ব্যবহার করছেন এক পাকিস্তানি ব্যবসায়ী। ছবি: এএফপি

ইন্টারনেট স্লো হয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের দায় আছে কী না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের দাবি 'একেবারেই মিথ্যা।'

তবে ফাতিমা স্বীকার করেন, সাইবার নিরাপত্তার উন্নয়নে সরকার সিস্টেম আপগ্রেড করছে।

'আমাদের দেশে সাইবার নিরাপত্তার ওপর যে পরিমাণ হামলা হয়, তাতে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার অধিকার রয়েছে সরকারের', যোগ করেন তিনি।

তবে মানবাধিকারকর্মীরা প্রতিমন্ত্রীর এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বলেন, তিনি 'রাজনীতিবিদের মতো সমালোচনা এড়িয়ে গেছেন।'

স্থানীয় ডিজিটাল নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বাইটস ফর অলের পরিচালক শাহজাদ আহমাদ বিবিসিকে জানান, তার প্রতিষ্ঠানের কাছে ফায়ারওয়ালের অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য যথেষ্ঠ প্রমাণ আছে।

শাহজাদ বলেন, 'ধারনা করছি এই ফায়ারওয়ালের উদ্দেশ্য হল অনলাইন ট্রাফিকের ওপর নজর রাখা এবং অনলাইন স্পেসে তথ্য প্রচারে বিধিনিষেধ আরোপ করা, বিশেষত, রাজনৈতিক মতামত।'

অনলাইন নির্ভর ব্যবসায়ী ও তাদের সংগঠনগুলো হুশিয়ারি দিয়েছে, ধীরগতির ইন্টারনেটের জন্য পাকিস্তানের অর্থনীতি বিপদের মুখে রয়েছে।

পাকিস্তান সফটওয়্যার হাউসেস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, ধীরগতির ইন্টারনেটের কারণে দেশটির আইটি খাতকে ৩০ কোটি ডলার লোকসান দিতে হতে পারে।

অ্যাসোসিয়েশন আরও জানায়, 'ফায়ারওয়াল বসানোর উদ্যোগে বারবার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। ভিপিএনও ঠিকমতো কাজ করছে না। যার ফলে, আমাদের আইটি ভিত্তিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।'

'চলমান পরিস্থিতি আইটি খাতের সম্ভাবনার ওপর সরাসরি, দৃশ্যমান ও আগ্রাসনের সমতুল্য', যোগ করে সংগঠনটি।

সংগঠনটি আরও জানায়, পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে সব আইটি প্রতিষ্ঠান গণহারে পাকিস্তান ছেড়ে যাবে। আমরা বহির্বিশ্বের সঙ্গে সব ধরনের আইটি ব্যবসা হারাব। খুব দ্রুত ব্যবস্থা না হলে এটাই হবে অনিবার্য পরিণতি।

মানবাধিকারকর্মীরা ইন্টারনেট সেবাকে পাকিস্তানের সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়ে ইসলামাবাদের হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছে।

Comments