কে হবেন হিজবুল্লাহ প্রধান?

হাশেম সাফিএদ্দিন (বাঁয়ে) ও নাঈম কাশেম (ডানে)। কোলাজ ছবি: সংগৃহীত
হাশেম সাফিএদ্দিন (বাঁয়ে) ও নাঈম কাশেম (ডানে)। কোলাজ ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ৩২ বছর ধরে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন হাসান নাসরাল্লাহ। গতকাল শনিবার ইসরায়েলি হামলায় নিহতের পর সংগঠনটির নেতৃত্ব সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তবে পরবর্তী নেতা কে হবেন, তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।

নাসরাল্লাহ শুধু হিজবুল্লাহ প্রধানই ছিলেন না, তিনি ছিলেন লেবাননের শিয়াদের অবিসংবাদিত নেতা।

১৯৯২ সালে সংগঠনটির মহাসচিব হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে হিজবুল্লাহ ও নাসরাল্লাহর নাম সব সময়ই একই কাতারে উচ্চারণ করা হতো। হিজবুল্লাহ মানেই নাসরাল্লাহ, নাসরাল্লাহ মানেই হিজবুল্লাহ—এই মন্ত্রে চালিত সংগঠনটির জন্য নতুন নেতা খুঁজে পাওয়া খুব সহজ না হলেও, আপাতত আলোচনায় আছে দুইজনের নাম।

তারা হলেন হাশেম সাফিএদ্দিন ও নাঈম কাশেম।

গতকাল শনিবার আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

হাশেম সাফিএদ্দিন

হিজবুল্লাহর নির্বাহী কাউন্সিলের প্রধান হাশেম সাফিএদ্দিন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
হিজবুল্লাহর নির্বাহী কাউন্সিলের প্রধান হাশেম সাফিএদ্দিন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

হাশেম সাফিএদ্দিন হিজবুল্লাহর নির্বাহী কাউন্সিলের প্রধান। তার অপর পরিচয়, তিনি প্রয়াত হাসান নাসরাল্লাহর আপন চাচাতো ভাই। বিশ্লেষকদের মতে, হিজবুল্লাহর পরবর্তী প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে সাফিএদ্দিনের।

১৯৬৪ সালে তিনি দক্ষিণ লেবাননের ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় শহর টায়ারের দক্ষিণে দেইর কানৌন এন-নাহার গ্রামে জন্ম নেন। শিয়া ধর্মীয় শিক্ষার মূল দুই কেন্দ্র ইরাকের নাজাফ ও ইরানের কোমে ধর্মতত্ব নিয়ে অধ্যয়ন করেন নাসরাল্লাহ ও সাফিএদ্দিন। হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠার অল্প সময় পর এই সংগঠনে যোগ দেন দুইজনই।

সাফিএদ্দিন সম্ভ্রান্ত শিয়া পরিবারের সদস্য। এই পরিবার থেকে অসংখ্য ধর্মীয় শিক্ষাবিদ ও লেবাননের পার্লামেন্ট সদস্য হয়েছেন। তার ভাই আবদুল্লাহ ইরানে হিজবুল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত আছেন। ইরানের সঙ্গে সাফিএদ্দিনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে।

সাফিএদ্দিনের ছেলে রেজা ইরানের সাবেক শীর্ষ জেনারেল কাশেম সোলেমানির মেয়েকে বিয়ে করেন। ২০২০ সালে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন হামলায় সোলেমানি নিহত হন।

নির্বাহী কাউন্সিলের নেতৃত্বের পাশাপাশি সাফিএদ্দিন সংগঠনটির শুরা কাউন্সিলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও জিহাদি কাউন্সিলের প্রধান। সংগঠনে তার ভূমিকার জন্য হিজবুল্লাহর বিদেশি শত্রুরা তাকে হত্যা করতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব সাফিএদ্দিনকে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি তার সম্পদ জব্দ করেছে।

নাঈম কাশেম

নাঈম কাশেম। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
নাঈম কাশেম। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

হিজবুল্লাহর উপ-মহাসচিব নাঈম কাশেমকে (৭১) সংগঠনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির গণ্য করা হয়।

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে নাবাতিয়েহ শহরের কিফার কিলা গ্রামে তার জন্ম। ওই গ্রামে গত অক্টোবর থেকে শুরু করে অসংখ্যবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

শিয়া রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত নাঈম কাশেম। ১৯৭০ এর দশকে তিনি প্রয়াত ইমাম মুসা আল-সাদর এর দল 'বঞ্চিতদের আন্দোলনে' যোগ দেন। পরে দলটি লেবাননের শিয়া দল 'আমাল আন্দোলনের' সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর আমাল ছেড়ে তিনি ১৯৮০র দশকের শুরুতে হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। তিনি দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ধর্মীয় গুরু হিসেবে যোগ দেন।

কাশেমের অন্যতম ধর্মীয় শিক্ষক ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ সম্মানের অধিকারী আয়াতুল্লাহ মোহাম্মাদ হুসেইন ফাদলাল্লাহ। পরে কাশেম নিজেও বেশ কয়েক দশক বৈরুতে ধর্ম শিক্ষার ক্লাস নিয়েছেন।

হিজবুল্লাহ গোপন সংগঠন। এ কারণে সংগঠনে কাশেমের বিস্তারিত ভূমিকা সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায়নি। তবে এক পর্যায়ে তিনি হিজবুল্লাহর শিক্ষা নেটওয়ার্ক ও পার্লামেন্ট সংক্রান্ত কার্যক্রমের দায়িত্বে ছিলেন বলে জানা যায়।

১৯৯১ সালে তৎকালীন মহাসচিব আব্বাস আল-মুসাউই উপ-মহাসচিব পদে কাশেমকে নিয়োগ দেন। মুসাউইকেও ইসরায়েল হত্যা করে।

হিজবুল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে গত কয়েক বছর তিনি অসংখ্যবার জনসম্মুখে এসেছেন। দলের শুরা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০০৫ সালে তিনি 'হিজবুল্লাহ, দ্য স্টোরি ফ্রম উইদিন' শিরোনামে বই লেখেন। এটি অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
probe committee for past elections in Bangladesh

Govt launches probe into last 3 national polls

The government has formed a committee to investigate alleged corruption, irregularities and criminal activities in the last three general elections.

1h ago