ইসরায়েলের হাত ইরান পর্যন্তও পৌঁছাতে পারে: নেতানিয়াহু

পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের সমর্থনেই মূলত ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে সমীহ জাগানিয়া শক্তিতে পরিণত হয় হিজবুল্লাহ।
জাতিসংঘে ভাষণ দিচ্ছেন নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স
জাতিসংঘে ভাষণ দিচ্ছেন নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলি বিমান হামলায় লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছেন। এই লক্ষ্য অর্জনে ইসরায়েলি সেনাদের প্রশংসা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সঙ্গে হিজবুল্লাহর মূল সমর্থক ইরানকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল এই অঞ্চলের যেকোনো জায়গায় হামলা চালাতে সক্ষম।

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।

শুক্রবার বৈরুতে সিরিজ বোমা হামলায় হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। পরবর্তীতে শনিবার হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

ইসরায়েলি বিমান হামলার পর বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলী। ছবি: রয়টার্স (২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪)
ইসরায়েলি বিমান হামলার পর বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলী। ছবি: রয়টার্স (২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪)

এই পরিস্থিতিতে, নেতানিয়াহু ইরানের প্রতিও সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বলে মত দেন বিশ্লেষকরা।

বহু বছর ধরে হিজবুল্লাহকে অস্ত্র, তহবিল ও প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করে এসেছে ইরান।

পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের সমর্থনেই মূলত ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে সমীহ জাগানিয়া শক্তিতে পরিণত হয় হিজবুল্লাহ।

ইরানকে হুশিয়ারি দিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, 'যারা আমাদের ওপর হামলা চালায়, আমরা তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালাই। মধ্যপ্রাচ্যে এমন কোনো জায়গা নেই যা ইসরায়েলের নাগালের বাইরে, এবং আজকেই আপনারা অনুধাবন করতে পেরেছেন, কথাটা কতটুকু সত্য।'

'ইসরায়েলের হাত ইরান পর্যন্তও পৌঁছাতে পারে', বলেন তিনি।

ইতোমধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে নিরাপদ অবস্থানে সরিয়ে নিয়েছে তেহরান।

ইরানের  সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ফাইল ছবি: রয়টার্স

এই অভিযানের পর এটাই নেতানিয়াহুর জনসম্মুখে প্রথম বক্তব্য। যখন তিনি এই বক্তব্য দেন, তখনো লেবাননে ইসরায়েলের নিরবচ্ছিন্ন বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। আইডিএফ ইতোমধ্যে লেবানন সীমান্ত অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। উদ্দেশ্য, ইরান থেকে হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র পাচার বন্ধ করা। পাশাপাশি হামলার মাত্রা বাড়ানো ও স্থল অভিযান শুরুরও ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটি।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে বক্তব্য রাখার পর দেশে ফিরে জেরুজালেমে বক্তব্য রাখেন নেতানিয়াহু।

তিনি বলেন, 'চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নাসরাল্লাহকে নির্মূল করা জরুরি ছিল। এই উদ্যোগের ফলে হিজবুল্লাহর প্রায় এক বছরব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন রকেট হামলার মুখে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া ইসরায়েলিরা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারার পথ সুগম হয়েছে।'

'নাসরাল্লাহ সাধারণ কোনো সন্ত্রাসী ছিলেন না। তিনি ছিলেন সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী', যোগ করেন তিনি।

নেতানিয়াহু আরও বলেন, 'নাসরাল্লাহকে নির্মূল করা ছিল আমাদের নির্ধারণ করা লক্ষ্যমাত্রার অত্যাবশ্যক উপকরণ।'

'আমাদের লক্ষ্য উত্তরের বাসিন্দাদের নিরাপদে বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া এবং আগামী বেশ কয়েক বছরের জন্য এই অঞ্চলের ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে দেওয়া', যোগ করেন তিনি।

'যতদিন নাসরাল্লাহ বেঁচে থাকতেন, তিনি খুব দ্রুতই হিজবুল্লাহর সক্ষমতাকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারতেন।

ইরাকের বসরায় নাসরাল্লাহকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
ইরাকের বসরায় নাসরাল্লাহকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

দীর্ঘ দিন ধরে ইসরায়েলের লক্ষ্য ছিলেন হাসান নাসরাল্লাহ। আততায়ীর হামলা থেকে বাঁচতে প্রায় এক দশকের বেশি সময় তিনি জনসম্মুখে আসেননি। তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি যুদ্ধও বিমান লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণে দাহিয়েহ অঞ্চলে হিজবুল্লাহর সুরক্ষিত ঘাঁটি ও সদর দপ্তরে বোমা হামলা চালায়। এতে নাসরাল্লাহ সহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডার নিহত হন। আহত হন আরও অনেকেই।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন মতে, ইসরায়েলি যুদ্ধ বিমানগুলো অন্তত ১৫টি দুই হাজার পাউন্ডের বোমা বহন করছিল। যার মধ্যে মার্কিন জিডিএএম কিটযুক্ত বিএলইউ-১০৯ বোমাও ছিল। এই বোমাগুলো ভূপৃষ্ঠ ভেদ করে ভূগর্ভস্থ লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে। এগুলো 'বাংকার বাস্টার' বোমা হিসেবে পরিচিত।

জেরুজালেমে নেতানিয়াহু গাজার যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে বলেন, নাসরাল্লাহর প্রয়াণে হামাস আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, '(হামাস নেতা ইয়াহিয়া) সিনওয়ার যখন দেখবেন যে হিজবুল্লাহ আর তাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসছে না, তখন তিনি (ইসরায়েলি) জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টির ওপর আরও গুরুত্ব দেবেন।'

সংগঠনের শীর্ষ নেতা ও জ্যেষ্ঠ কমান্ডারকে হারিয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে হিজবুল্লাহ। তা সত্ত্বেও, শনিবারও ইসরায়েলের উদ্দেশে ১০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে হিজবুল্লাহ। এমন কি, প্রথমবারের মতো জেরুজালেম লক্ষ্য করে হামলা চালায় সংগঠনটি। 

Comments

The Daily Star  | English

The psychological costs of an uprising

The systemic issues make even the admission of one’s struggles a minefield

8h ago