যে কারণে নেতানিয়াহুর চোখে ট্রাম্পই সেরা

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর অল্প কয়েক দিন বাকি। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রত্যাশা, নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে আবারও প্রেসিডেন্ট হবেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনটাই মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

আজ রোববার এএফপির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এর আগে ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সে সময়টিকে নেতানিয়াহুর জন্য 'সুসময়' বলে অভিহিত করেন বিশ্লেষকরা। ৫ নভেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গে মিশ্র বার্তা দিয়েছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে ইরানের পরমাণু সক্ষমতায় আঘাত হানতে উৎসাহ দিয়েছেন। তবে শনিবারের হামলায় পরমাণু স্থাপনা এড়িয়ে গেছে ইসরায়েল।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স

অপরদিকে, তিনি ইসরায়েলি নেতার প্রত্যক্ষ সমালোচনাও করেছেন। এক বক্তব্যে তিনি বলেন, 'আমি প্রেসিডেন্ট থাকলে ৭ অক্টোবরের হামলা হোতই না।' যুদ্ধ অবসানে ইসরায়েলকে চাপ দেওয়ার অঙ্গীকারও করেন তিনি।

কিন্তু এ ধরনের অস্পষ্ট নীতি আর সঙ্গে ট্রাম্পের 'মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন' শ্লোগানের বিবেচনায়, বিশ্লেষকরা বলছেন নেতানিয়াহুর পছন্দের প্রার্থী কমলা নন, ট্রাম্প।

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প 'নিজের সমস্যা নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকবেন' এবং নেতানিয়াহুকে তার নিজের পছন্দ মতো গাজা ও লেবাননসহ অন্যান্য অঞ্চলে সংঘাতে চালিয়ে যেতে দেবেন বলে মত দেন বিশ্লেষকরা। 

হিব্রু ইউনিভার্সিটি অব জেরুজালেমের পলিটিকাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক গিডন রাহাত এএফপিকে বলেন, 'নেতানিয়াহুর জন্য অন্যতম মাইলফলক হলো মার্কিন নির্বাচন। তিনি ট্রাম্পের বিজয়ের জন্য প্রার্থনা করছেন। তিনি মনে করেন, এতে অনেক স্বাধীনতা পাবেন এবং এই স্বাধীনতা কাজে লাগিয়ে তার আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ করবেন।'

নেতানিয়াহুর সাবেক চিফ অব স্টাফ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবিব বুশিনস্কি একই সুরে বলেন, 'রিপাবলিকানদের সঙ্গে তার অভিজ্ঞতা খুব ভাল। অপরদিকে, ডেমোক্র্যাটরা তার সঙ্গে তুলনামূলকভাবে কঠোর আচরণ করেছেন।'

ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৭ বছরের মেয়াদে নেতানিয়াহু রিপাবলিকানদের মধ্যে শুধু ট্রাম্পকেই টেবিলের অপর পাশে পেয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে ট্রাম্প এমন কিছু উদ্যোগ নেন যাতে নেতানিয়াহু ব্যক্তিগতভাবে উপকৃত হন। মার্কিন নীতির পরিবর্তনে ইসরায়েলি জনগণের কাছে নেতানিয়াহুর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। মূলত ইসরায়েল, ফিলিস্তিন ও সার্বিকভাবে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে এসব পরিবর্তন আনেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করেন। জেরুজালেমই অবিভক্ত ইসরায়েলের রাজধানী—এমন দাবি করে ইসরায়েলিরা। তিনি গোলাম মালভূমির প্রতি ইসরায়েলি দাবিতে সমর্থন দেন এবং ইসরায়েলের সঙ্গে তিন আরব দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগের তদারকই করেন।

ট্রাম্প ইসরায়েলের চিরশত্রু ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসেন এবং দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপ করেন।

অপরদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সম্পর্ককে খানিকটা বরফ-শীতলই বলা যায়। যদিও বাইডেন দাবি করেন, ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক 'ইস্পাত কঠিন'। 

ট্রাম্প উৎসাহ দিলেও বাইডেন নেতানিয়াহুকে ইরানের পরমাণু স্থাপনা ও তেল অবকাঠামোর বিরুদ্ধে হামলা চালানোর বিরুদ্ধে হুশিয়ারি দেন।

ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু একে অপরকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে বিবেচনা করেন। ট্রাম্প এ সপ্তাহেই জানিয়েছেন 'বিবির' (নেতানিয়াহুর ডাক নাম) সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা হয় তার।

জর্জিয়ার এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, 'আমাদের মধ্যে খুব ভাল সম্পর্ক। আমরা তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করব।'

বুশিনস্কি বলেন, এসব ইতিবাচক বিষয় ট্রাম্প প্রসঙ্গে যেকোনো উদ্বেগ দূর করবে।

'ট্রাম্পের খেয়ালি আচরণ ঝুঁকিপূর্ণ হলেও নেতানিয়াহু সেই ঝুঁকি নিতে আগ্রহী', যোগ করেন তিনি।

ইসরায়েলেও জনপ্রিয় ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের সাধারণ জনগণের কাছেও ট্রাম্প বেশ জনপ্রিয় একটি নাম।

আঞ্চলিক পররাষ্ট্র নীতি সংক্রান্ত ইসরায়েলি সংস্থা মিটভিম সেপ্টেম্বরে জনমত জরিপ চালিয়ে জানতে পেরেছে, ৬৮ শতাংশ ইসরায়েলি মনে করেন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষা হবে।

মাত্র ১৪ শতাংশ কমলা হ্যারিসকে বেছে নেন। যদিও তিনি বারবার ইসরায়েল ও ইসরায়েলের নিজেকে প্রতিরক্ষার অধিকারের সমর্থনে বক্তব্য রেখেছেন।

সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিবিদ নাদাভ তামির বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র নয় এমন যেকোনো উদার গণতান্ত্রিক দেশ বিচারে ইসরায়েলে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি।'

Comments

The Daily Star  | English

Disrupting office work: Govt employees can be punished within 8 days

The interim government has moved to amend the Government Service Act-2018 to allow swift disciplinary action against its employees who will be found guilty of disrupting official activities.

6h ago