যে কারণে ইরানে সর্বাত্মক হামলা চালায়নি ইসরায়েল

ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলবিরোধী বিশাল সাইজের বিলবোর্ড বসানো হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

গত অক্টোবরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ইরানে 'বড়সড় আক্রমণের' হুমকি দিয়ে আসছিল ইসরায়েল। কিন্তু ইরানের অনেক সরকারি কর্মকর্তাও শনিবার ভোররাতে ইসরায়েলের বিমান হামলাকে 'দুর্বল' বলে রায় দিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সক্ষমতা ও ইচ্ছা থাকলেও কেন সর্বাত্মক হামলা চালায়নি ইসরায়েল? 

ইসরায়েলি পত্রিকা দ্য জেরুজালেম পোস্ট দাবি করেছে, মূলত নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চাপের মুখে আক্রমণের মাত্রা 'সীমিত' রেখেছে দেশটি। তবে নির্বাচনের পর বড় মাত্রার আক্রমণ আসতে পারে। 

আজ রোববার ইসরায়েলের সরকারপন্থী এই পত্রিকার সম্পাদকীয়তে ইসরায়েলের আক্রমণ ও পরিকল্পনার বিস্তারিত কিছু দিক উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়, 'আপাতত' শুধু ইরানের সামরিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করেছে ইসরায়েল। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন তৈরির একটি কারখানায় হামলা চালানোরও দাবি করা হয়। 

তবে ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম ইরনা দাবি করেছে, ইসরায়েলের আক্রমণে দুটি সীমান্ত প্রদেশ ও রাজধানী তেহরানের কাছাকাছি কিছু রাডার ইউনিট 'সামান্য' ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সাফল্য 

জেরুজালেম পোস্ট জানায়, ইরানের দুই শতাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার জবাবে ইসরায়েলের এই আক্রমণ 'যথার্থ' না বলে রায় দিয়েছে দেশটির সরকারি ও বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মী। এর পেছনে ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক চাপকে দায়ী করছেন তারা। 

গত ১ অক্টোবরের আক্রমণের পর থেকেই বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে সতর্ক করে এসেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা বা অর্থনৈতিক অবকাঠামোগুলোকে যেন লক্ষ্যবস্তু না করে। মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের প্রভাব এই প্রশাসনের জনপ্রিয়তার ওপরও পড়েছে। নির্বাচনের আগে ইরানের ওপর বড় আক্রমণের প্রভাব নির্বাচনের ফলাফলে পড়তে পারত বলে আশঙ্কা করছিলেন সংশ্লিষ্টরা। 

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সাদেগ জিবাকালাম গার্ডিয়ানকে বলেন, 'এই হামলাকে ইসরায়েলের সামরিক সাফল্য না বলে ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সাফল্য বলতে হবে। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নেতানিয়াহুকে আক্রমণ সীমিত করতে বাধ্য করেছে, যাতে ইরান ক্ষেপে না যায়। যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চায় না।'

সামনে বড় আক্রমণ?

জেরুজালেম পোস্ট দাবি করে, শনিবারের আক্রমণে সিরিয়া, ইরাক এবং ইরানের অনেকগুলো বিমান প্রতিরক্ষা ব্যাটারি এবং রাডার ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী (আইএএফ)। এর মাধ্যমে ইরানে আক্রমণের 'একটি পরিষ্কার রাস্তা' তৈরি করে তারা। 

এই রাস্তা তৈরির মূল উদ্দেশ্য একটিই, সামনে ইরানে বড়সড় হামলা চালানো। জেরুজালেম পোস্টের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, 'এবার ইরানের পারমাণবিক ও তেল স্থাপনাগুলোতে হামলা করা হয়নি। এর মানে এই না যে সামনে হবে না।'

সম্পাদকীয়তে আরও দাবি করা হয়, এসব স্থাপনায় হামলার ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিতে পারেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস এর বিরোধিতা করতে পারেন। তাই নির্বাচনের আগে এ ব্যাপারে ঝুঁকি নেয়নি ইসরায়েল। 

আজ এএফপির এক প্রতিবেদনে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠদের বরাত দিয়ে বলা হয়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে চাইছেন। 

হিব্রু ইউনিভার্সিটি অব জেরুজালেমের পলিটিকাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক গিডন রাহাত এএফপিকে বলেন, 'নেতানিয়াহুর জন্য অন্যতম মাইলফলক হলো মার্কিন নির্বাচন। তিনি ট্রাম্পের বিজয়ের জন্য প্রার্থনা করছেন। তিনি মনে করেন, এতে অনেক স্বাধীনতা পাবেন এবং এই স্বাধীনতা কাজে লাগিয়ে তার আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ করবেন।'

ট্রাম্প নির্বাচিত হলে তার প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে ইরানে বড় হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল। এ ছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসন নেতানিয়াহুকে গাজা ও লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অঞ্চলে সংঘাতে চালিয়ে যেতে দেবে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।  
 

Comments

The Daily Star  | English

Govt relieves Kuet VC, Pro-VC of duties to resolve crisis

A search committee will soon be formed to appoint new candidates to the two posts

1h ago