রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র দুর্নীতি: টিউলিপকে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ

যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতি বিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি: টিউলিপের ইনস্টাগ্রাম
যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতি বিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি: টিউলিপের ইনস্টাগ্রাম

বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্তে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দেশটির মন্ত্রিসভা কার্যালয়ের প্রোপ্রাইটি অ্যান্ড এথিকস টিম (পিইটি)। 

আজ সোমবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসে এই তথ্য জানানো হয়। 

যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের বন্ধু হিসেবে পরিচিত টিউলিপ হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনের জনপ্রতিনিধি। তিনি দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতি বিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি)। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন তিনি। 

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০১৩ সালে বাংলাদেশে বেশি অর্থ ব্যয়ে একটি নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন। এই চুক্তি থেকে তিনি ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা) আত্মসাত করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে। 

আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তের আওতায় রয়েছে দুর্নীতির এই অভিযোগ। শেখ হাসিনা টিউলিপ সিদ্দিকের খালা।

পিইটির জিজ্ঞাসাবাদ

তিনি মন্ত্রিসভার প্রোপ্রাইটি অ্যান্ড এথিকস টিমের (পিইটি) সঙ্গে এই অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে সম্মতি দিলে বৃহস্পতিবার টিউলিপের কার্যালয়ে পিইটির এক কর্মকর্তা এসে তার সঙ্গে দেখা করেন।

ওই কর্মকর্তা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করলে সেগুলোর জবাব দেন টিউলিপ। 

টিউলিপ সিদ্দিক দাবি করেছেন, এগুলো 'মিথ্যা অভিযোগ' এবং 'পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।'

দ্য টাইমসের প্রতিবেদন মতে, রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তি নিয়ে টিউলিপের ব্যাখ্যা কোনো ধরনের যাচাই ছাড়াই গৃহীত হয়েছে।

তিনি পিইটির প্রতিনিধির প্রশ্নের জবাব দিলেও এর অর্থ এটা নয় যে তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের নাগরিক সেবা বিষয়ক তদন্ত পরিচালিত হচ্ছে।

টিউলিপের সঙ্গে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়নি টাইমস।

যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা ও টিউলিপের ব্যাখ্যা

পুতিনের সঙ্গে টিউলিপ, হাসিনা ও অন্যানরা। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
পুতিনের সঙ্গে টিউলিপ, হাসিনা ও অন্যানরা। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

মন্ত্রিসভা কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, 'আগে আমরা যা বলেছি, সেটাই আবারও জানাচ্ছি। ওই মন্ত্রী (টিউলিপ) এ বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।'

এপির একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে ক্রেমলিনে শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চুক্তি সই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। পুতিনের সঙ্গে ছবিও তোলেন তিনি।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই চুক্তির অংশ হিসেবে বড় অংকের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।  

টিউলিপ সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলেছে, তিনি বাংলাদেশ ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকে মধ্যস্থতা করেছেন, এমন অভিযোগ 'অতিরঞ্জিত' এবং 'পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।'

পিইটির কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি একই ধরনের বক্তব্য দেন। 'রাজনৈতিক চক্রান্তের' শিকার হওয়ার দাবি করেন।

সূত্রটি আরও জানায়, তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে প্রায় এক দশকের বেশি সময় আগে তিনি রাশিয়ায় তার খালার (হাসিনা) সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন কারণ যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশ যাওয়ার তুলনায় রাশিয়া যাওয়ার ফ্লাইট-দূরত্ব অপেক্ষাকৃত কম।

অস্ত্র চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন

শনিবার দ্য ডেইলি মেইল অপর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, একই বৈঠকে সাক্ষরিত ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

দ্য মেইল জানিয়েছে, রুশ অস্ত্র ও সামরিক উপকরণ কেনার জন্য হাসিনা ১০০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তিতে সাক্ষর করেছেন।

সে সময় টিউলিপ লেবার পার্টির কাউন্সিলর ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে তিনি এমপি হন। দলের মুখপাত্র দ্য মেইলকে বলেন, 'টিউলিপ এমপি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার দুই বছর আগে দুইটি দেশের মধ্যে চুক্তি সাক্ষরের সঙ্গে তার কোনো ধরনের যোগসূত্র নেই।'

টিউলিপ (৪২) এর আগে দাবি করেছেন, পুতিনের অনুরোধেই তার সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন তিনি। পুতিন তাকি জিজ্ঞাসা করেন, 'আপনার পরিবারের সদস্যরা কি এখানে আছে? আমি সবার সঙ্গে একটি ছবি চাই।'

বাংলাদেশে দুদকের তদন্ত ও ডাউনিং স্ট্রিটের দৃষ্টিভঙ্গি 

প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের সঙ্গে টিউলিপ। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের সঙ্গে টিউলিপ। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

মেইলের রোববারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিউলিপ ও অন্যদের বিরুদ্ধে তথ্য=প্রমাণ জোগাড় করছে। এই প্রক্রিয়া শেষে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই টিউলিপের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হবে।

টিউলিপের জবাবের ভিত্তিতে তদন্তকারীরা পরবর্তী উদ্যোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এখনো টিউলিপের সঙ্গে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেনি বলে জানা গেছে।

দুদকের তদন্ত প্রসঙ্গে স্টারমার জানিয়েছেন, টিউলিপের ওপর আস্থা হারাননি তিনি। তার মুখপাত্র জানান, মন্ত্রীদের জন্য 'খুবই স্পষ্ট আচরণবিধি রয়েছে' যা এ ক্ষেত্রে যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে।

অপর এক সূত্র জানান, টিউলিপের সঙ্গে স্টারমারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

দ্য টাইমসের দাবি, রাশিয়ার চুক্তি নিয়ে টিউলিপের ব্যাখ্যা পিইটি দল বিনা চ্যালেঞ্জে গ্রহণ করেছে।

তবে বিষয়টিকে গুরুতর ভাবেই নিয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট, যা পিইটির প্রতিনিধির সঙ্গে টিউলিপের সাক্ষাতে স্পষ্ট হয়েছে।

এক সূত্র জানান, হাসিনার সঙ্গে টিউলিপের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে ভবিষ্যতে আরও বিব্রতকর পরিস্থিতির উদ্রেক হতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশের পতিত সরকারপ্রধান হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ আরও অসংখ্য অভিযোগ আনা হয়েছে।

টিউলিপ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অভিযোগ অস্বীকার করেননি। এর আগে তিনি তার খালাকে একজন 'অসামান্য রোল মডেল' বলে অভিহিত করেন।

আগস্টে শিক্ষার্থী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান হাসিনা।

২০ বছরের বেশি বাংলাদেশের নেতৃত্বে থাকা শেখ হাসিনাকে দেখা হতো একজন একনায়ক হিসেবে, যার সরকার নির্দয় ভাবে ভিন্নমতের ব্যক্তিদের দমন করত।

Comments

The Daily Star  | English
Touhid Hossain Rohingya statement

Rohingya repatriation unlikely amid Myanmar’s civil war: foreign adviser

He highlights the 2017 mass exodus—prompted by brutal military crackdowns was the third major wave of Rohingyas fleeing Myanmar

1h ago